কংগ্রেসকে কী মিথ্যা বলেছেন জেফ বেজোস

গত বছর কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেন বেজোস

মার্কিন শীর্ষ আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন, ই–কমার্স কোম্পানি আমাজনের নির্বাহী কংগ্রেসকে বিভ্রান্ত বা মিথ্যা বলে থাকতে পারেন। এই নির্বাহীর মধ্যে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও আছেন। হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির সদস্যরা বলেছেন যে তাঁরা কোম্পানির ভেতরে ‘অপরাধ তদন্ত’ করার কথা ভাবছেন।

সম্প্রতি আমাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটি অন্য ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে তা নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করছে এবং সার্চ দিলে সবার ওপরে তার সেই নিজস্ব পণ্যই বারবার আসে। সদ্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স দাবি করেছে যে তাদের এক তদন্তে এমনই প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এরপরই মার্কিন আইনপ্রণেতারা ওই কথা বলেন। তবে আমাজন জোরালোভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আমাজনের এক মুখপাত্র জানান, ‘আমাজনের নির্বাহীরা কমিটিকে বিভ্রান্ত করেননি। আমরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছি ও প্রশ্নবিদ্ধ মিডিয়া রেকর্ড সংশোধন করার চেষ্টা করেছি।’

এদিকে গতকাল সোমবার মার্কিন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির পাঁচ সদস্য আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ডি জ্যাসিকে চিঠি লিখেছিলেন। গত জুলাইয়ে জেফ বেজোসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অ্যান্ডি জ্যাসি। তাঁরা ওই চিঠিতে লেখেন রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও অন্য গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন যা উঠে এসেছে, তা আমাজনের শীর্ষ নির্বাহীদের সাক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতা করে। ওই প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে যে আমাজনের প্রতিনিধিরা কমিটিকে বিভ্রান্ত করেছেন। এটি আরও প্রমাণ করে যে তাঁরা ফেডারেল ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের জন্য কংগ্রেসের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন।

২০১৯ সাল থেকে হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতিযোগিতার তদন্ত করছে, যার মধ্যে আমাজন কীভাবে তার প্ল্যাটফর্ম থেকে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার তথ্য ব্যবহার করে এবং অন্যায়ভাবে তার নিজের পণ্যের পক্ষে কাজ করছে, তা রয়েছে। গত বছর জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে সাক্ষ্য প্রদানের সময় বেজোস বলেছিলেন যে তাঁর কোম্পানি নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শনের সুবিধা পেতে কর্মীদের অন্য বিক্রেতাদের তথ্য ব্যবহার করে না।

তবে এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমাজনের ভেতরকার নথি, হাজার হাজার ই–মেইল, কৌশলপত্র এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনার নথি দেখেছে রয়টার্স। তা থেকে দেখা গেছে যে কোম্পানিটি ভারতে নিজের পণ্যের প্রসারের জন্য অন্য বিক্রেতার পণ্য দেখানো বন্ধ করে রাখে এবং পদ্ধতিগতভাবে অনুসন্ধানের ফলাফলের হেরফের করে। ভারত কোম্পানির বৃহত্তম প্রবৃদ্ধির বাজারগুলোর মধ্যে একটি। অর্থাৎ, বেজোসের বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর কাজ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

নথিপত্রে দেখা যায় যে ভারতে আমাজনের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের দল কীভাবে গোপনে অভ্যন্তরীণ ডেটা ব্যবহার করে অন্য কোম্পানির বিক্রি করা পণ্য অনুলিপি করে এবং এরপর নিজেদের প্ল্যাটফর্মে তা গ্রাহকের কাছে অফার করে। কর্মচারীরা আমাজনের সার্চ ফলাফলে কারচুপি করে আমাজন অন্য ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়, যাতে কেবল আমাজনের নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোই প্রদর্শিত হয়। যেমন ভারতের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের একটি স্ট্র্যাটেজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটে প্রথম দুই–তিনবার সার্চে কেবল আমাজনের পণ্যই গ্রাহকের সামনে আসে। ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড জন মিলার। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে ওই শার্টের সবকিছুর নকল করেছে আমাজন।

অভ্যন্তরীণ নথি পড়ে দেখা গেছে, আমাজনের কর্মচারীরা অন্য ব্র্যান্ডের মালিকানাধীন তথ্য পর্যালোচনা করেছেন, যার মধ্যে গ্রাহকের আয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো পণ্যগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর প্রতিলিপি করা। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে আমাজনের এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে একটি ব্র্যান্ডের কৌশল তুলে ধরা হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে আমাজন নিজেদের সালিমো ব্র্যান্ড আনে। এই ব্র্যান্ডের খুব সাধারণ একটি কৌশল ছিল, পণ্য তৈরির জন্য আমাজন থেকে তথ্য ব্যবহার নিয়ে গ্রাহকদের কাছে এই পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য আমাজনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সুবিধা নেওয়া।

তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে আসছে আমাজন।