করোনায় বড়দের ব্যবসা কমেছে, ব্যতিক্রম ১১

বিদায়ী বছরের প্রথম ১১ মাসে শীর্ষ সাত রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে শুধু কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে। এ ছাড়া আরও ১০ দেশের রপ্তানি বেড়েছে।

করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের ব্যবসা প্রায় চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ২৪ শতাংশ কমে গেছে। সেই ধাক্কায় অধিকাংশ রপ্তানিকারক দেশই ব্যবসা হারিয়েছে। তবে স্রোতের বিপরীতে ১১টি দেশ ভালো করেছে। তাদের রপ্তানি বেড়েছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিদায়ী ২০২০ সালের প্রথম ১১ মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি-নভেম্বরে ৯৮ দেশ থেকে ৫ হাজার ৯২৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন। এই আয় তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ কম।

যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ সাত পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে কেবল কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে পৌনে ৫ শতাংশ। বাকি ছয় দেশের রপ্তানি কমেছে ৬ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশের ওপরে আছে শুধু ভিয়েতনাম। তাতে বলা যায়, বড় এই বাজারে রপ্তানিতে খুব খারাপ করছে না বাংলাদেশ।

ব্যতিক্রম ১১ দেশ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া গত বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় দেশটির রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

কম্বোডিয়া ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, হংকং, ম্যাকাও, মালাউই, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, সার্বিয়া ও উরুগুয়ের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে তাদের সম্মিলিত পোশাক রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৩২১ কোটি ডলার, যা কিনা বাংলাদেশের চেয়েও কম। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ৪৮৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

স্রোতের বিপরীতে ব্যবসা বাড়লেও ১১ দেশের মধ্যে মাত্র চারটির পোশাক রপ্তানি ১ কোটি ডলার বা ৮৫ কোটি টাকার বেশি। তার মধ্যে শীর্ষে থাকা কম্বোডিয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। বাকি তিন দেশ হচ্ছে হংকং, ইথিওপিয়া ও ম্যাকাও। ২০২০ সালের জানুয়ারি–নভেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হংকং ৩২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ইথিওপিয়া রপ্তানি করেছে ২০ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পোশাক। তাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ম্যাকাওয়ের রপ্তানির পরিমাণ ৬ কোটি ডলার। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ১৫৪ শতাংশ।

হাবুডুবু খাচ্ছে চীন

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে থাকলেও চীনের পায়ের নিচের মাটি নরম হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে ২০১৯ সালে চীনের পোশাক রপ্তানি ৯ শতাংশ কমেছিল। আর ২০২০ সালের শুরু থেকেই করোনার কারণে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ১১ মাসে চীন ১ হাজার ৪০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৪০ শতাংশ কম।

রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একপর্যায়ে চীনকে টপকে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। আবার দ্বিতীয় স্থানে ফিরে এসেছে দেশটি। তবে রপ্তানি কমার দিক থেকে অন্য প্রতিযোগী দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। গেল বছরের প্রথম ১১ মাসে ভিয়েতনাম ১ হাজার ১৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। তুলনামূলক ভালো অবস্থানের কারণে তাদের বাজার হিস্যা বাড়ছে। গত নভেম্বরে এসে সেটি ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশের দাঁড়িয়েছে।

কেমন করছে বাংলাদেশ

বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে আসতে থাকে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। জানুয়ারিতে ৬২ কোটি ডলার রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ।

করোনার কোপে মার্চ থেকে রপ্তানিতে ধস নামে। শেষ পর্যন্ত বাজারটিতে ১১ মাসে বাংলাদেশ ৪৮৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। রপ্তানি কমলেও বাজারটিতে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে হিস্যা ছিল ৭ শতাংশ। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। করোনাকালে বাংলাদেশ কতটা ভালো করেছে, তার জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট। সেটি হচ্ছে, চীনের ৪০, ভারতের ২৫, ইন্দোনেশিয়ার ১৯, মেক্সিকোর ৩১ শতাংশের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বলেন, ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অনেকটা স্বাভাবিক। যদিও এখনো ক্রয়াদেশ বেশি আসছে না। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের বাজার নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের বড় বাজার জার্মানিতে ১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও লকডাউন রয়েছে।’