করোনায় মাথাপিছু ক্ষতি প্রায় ৯০০ ডলার

  • ওইসিডি প্রকাশিত এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে ভাবা হচ্ছে, ততটা না-ও হতে পারে।

  • ওইসিডি বলছে, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পরিমাণ ৭ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে।

  • চীনের ১ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেই তুলনায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচন হতে পারে।

আগের মতো না হলেও শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
ছবি: এএফপি

২০২০ সাল যে এভাবে কাটবে, তা যেন কল্পনাতেও ছিল না বিশ্ববাসীর। চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া এক ভাইরাস যেন ওলটপালট করে দিয়েছে বিশ্বের সব হিসাব-নিকাশ। করোনা নামের ওই ভাইরাস এখন দুঃস্বপ্ন প্রায় সব দেশেরই। প্রাণহানির হার হয়তো সব দেশে এক নয়, তবে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না কেউই। দেশে দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে নেওয়া লকডাউন পদক্ষেপের কারণে বছরের প্রথমার্ধে রীতিমতো ভেঙেচুরে পড়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। অবশ্য লকডাউন শিথিলের পর অনেক দেশই বেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কয়েক মাস আগেও বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোতে বিশাল ধাক্কার আশঙ্কা করা হলেও বর্তমানে তাতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির চলতি বছরের পূর্বাভাস নিয়ে উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) প্রকাশিত এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে ভাবা হচ্ছে, ততটা না-ও হতে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি এই বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ সংকুচিত হবে। এ ছাড়া আগামী বছর ৫ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। যদিও সে অবস্থায় যেতে এখনো ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি

সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিশ্ব অর্থনীতিতে নজিরবিহীন সংকোচন ঘটালেও গত জুনের পর থেকে সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওইসিডি। এর আগে গত জুনে সংগঠনটি চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতি ৬ শতাংশ সংকুচিত এবং পরবর্তী বছর ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল। এখন তাদের পূর্বাভাসের কিছুটা উন্নতি হলেও বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অসামঞ্জস্য দেখা যেতে পারে বলেই সতর্ক করে দিয়েছে সংগঠনটি।

ওইসিডি বলছে, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পরিমাণ ৭ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। (১ ট্রিলিয়ন= ৭ লাখ কোটি) সে হিসাবে নারী-পুরুষ-শিশু সবার জন্যই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৯০০ ডলার করে। সংস্থাটি বলছে, ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকোচনের চিহ্ন বয়ে বেড়াবে ২০২০ সালটি। এ বছর আশা করা হলেও টিকার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী বছর সেটি এলে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ প্রত্যাশার চেয়ে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে অনেক দেশকেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতি জুনের প্রাক্কলনের চেয়ে ভালো করবে বলে জানিয়েছে ওইসিডি। সংগঠনটি বলছে, বিপরীতে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নেতিবাচক চিত্র দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে উদীয়মান বাজার যেমন ভারত ও মেক্সিকোর অর্থনীতিতে দুই ডিজিটের সংকোচন হতে পারে। তবে উন্নত দেশগুলো কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও চীন বাদে প্রায় সবারই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে চলতি বছর। চীনের ১ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেই তুলনায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচন হতে পারে। ইউরো ব্যবহারকারী ১৯ দেশের অর্থনীতির সার্বিক সংকোচন হতে পারে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

আস্থা ফেরাতে সরকারগুলো যা করতে পারে
ওইসিডি মনে করছে, এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাসের প্রকোপ কতটা বাড়তে পারে, ভোক্তা ও ব্যবসায়ের আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা কতটা চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে—এ রকম কিছু বিষয়। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে অনেক সরকারই অভূতপূর্ব সব পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা হতে হবে আরও লক্ষ্যনির্ভর এবং পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে যথেষ্ট নমনীয়। জনগণের মধ্যে নীতিনির্ধারকদের এমন একটি আস্থা তৈরি করতে হবে যে তাঁরা তাঁদের জীবনমানের উন্নতির জন্য চেষ্টা করছেন এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করার জন্য কাজ করছেন।

ছবি: রয়টার্স

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ
বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা যেখানেই প্রয়োজন, সেখানে যেন দ্রুত সরবরাহ করা যায়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর তহবিল এবং বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

ডিজিটালাইজেশন লক্ষ্য, চাকরি ধরে রাখা এবং অন্যান্য সহায়তানীতি, যা ব্যবসাকে টেকসই পণ্য ও সেবায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে, সেগুলোর বিষয়ে নজর দিতে হবে।

সবুজ পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ
ডিজিটালাইজেশন লক্ষ্য, চাকরি ধরে রাখা এবং অন্যান্য সহায়তানীতি, যা ব্যবসাকে টেকসই পণ্য ও সেবায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে, সেগুলোর বিষয়ে নজর দিতে হবে। সবুজ শক্তি, অবকাঠামো, পরিবহন ও আবাসনগুলোতে স্বল্প কার্বন নিঃসরণের গতি বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।

মানুষের জন্য বিনিয়োগ
দুর্বলদের জন্য পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা সরবরাহ করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নতুন ধরনের কাজের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে সবার জন্য সুযোগ রয়েছে। উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে যেমন তরুণ জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বিনিয়োগ করতে হবে।