কোভিড শাপেও বর হচ্ছে মধ্যবিত্তের বাড়তি সঞ্চয়

কোভিড মহামারিতে কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন, আয় কমেছে তার চেয়েও বেশি মানুষের, কিন্তু যাঁদের চাকরি যায়নি বা যাঁরা ঘরে বসে কাজ করতে পেরেছেন বা এখনো করছেন, তাঁদের উল্টো সঞ্চয় বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলপিজি ফাইন্যান্সের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মহামারির মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৬০ লাখ দৈব সঞ্চয়কারী সৃষ্টি হয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির মধ্যে যাঁদের চাকরি যায়নি বা আয় কমেনি, তাঁরা সাবধানতাবশত বেড়াতে যাননি বা বাইরে খেতে যাননি, অতি প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কিছু কেনেননি। আর তাতেই বেড়েছে সঞ্চয়। এদিকে গুগল, ফেসবুকসহ বেশ কিছু বড় কোম্পানি চিরস্থায়ীভাবে ঘর থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় মানুষের সঞ্চয় আরও বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে পরিস্থিতি সবার জন্য এতটা মধুর নয়। সিংহভাগ মানুষের জীবন তেতো হয়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস জানাচ্ছে, সংকটের কারণে ৯০ লক্ষাধিক মানুষকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধার করতে হয়েছে।

তবে ঘরে থেকে কাজ করা মানুষের মধ্যে তরুণতম মানুষের অনুপাত কম। ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষেরা ঘরে থেকে কাজ করার কারণে যাতায়াত ও হাতখরচ অনেকটাই কমাতে পেরেছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব হওয়ার কারণে তাঁদের ছুটিতে যাওয়া বা বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতাও কম ছিল—স্বাস্থ্যগত কারণেই।

কোভিড একসময় চলে যাবে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরবে। তবে ঘর থেকে কাজ এবং কার্যালয়ে যাওয়ার প্রবণতার মিশ্রণের ফলে এই মানুষেরা ভ্রমণ খরচ আরও বাঁচাতে পারবেন বলেই ধারণা করা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাড়তি সঞ্চয় মানুষ ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে পারে। ঋণ পরিশোধসহ জরুরি কাজের জন্য টাকা জমিয়ে রাখা বা পেনশনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পে মানুষ এ টাকা জমাতে পারে।

ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের ঢেউ যেন শেষ হওয়ার নয়। তবে টিকাদান শুরু হওয়ার পর সংক্রমণের হার কমছে। অর্থনীতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। তবে প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যেতে আরও সময় লেগে যাবে। বিশেষ করে সেবা খাত পুরোপুরি চালু হতে সময় লেগে যাবে। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই খরচে আগ্রহী হবে না। ফলে সেবা খাত পুরোপুরি সচল হতে বেশ সময় লেগে যাবে। অর্থনীতিও তাতে ভুগবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। মানুষের আস্থা ফিরে এলেই কেবল সেবা খাত স্বাভাবিক হবে। তাতে সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাক্‌–মহামারি পর্যায়ে ফিরে যেতে আরও দু–তিন বছর লেগে যাবে বলেই তাঁদের ধারণা।

দেশেও সঞ্চয় বেড়েছে

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো। ২০১৯–২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালে কোভিডের মধ্যে ব্যাংক আমানত বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক আমানত ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা—সরকারি ও আন্তব্যাংক আমানত ছাড়া।

তবে অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য মানুষের ভোগব্যয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এর জন্য দরকার আস্থা। টিকাদান দ্রুত শেষ করা গেলে এ বছর মানুষের মনে আস্থা ফিরবে। আর তাতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।