কোভিডের টিকার মেধাস্বত্ব তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সায়

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথেরিন টাই বলেছেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু এই মহামারি দূর করতে ভারতের প্রস্তাবে সায় দিচ্ছে আমেরিকা।’

ছবি: রয়টার্স

কোভিডের টিকার ওপর থেকে মেধাস্বত্ব তুলে নেওয়ার যে প্রস্তাব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে সায় দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতে কোভিডে মৃত্যু ও আক্রান্ত প্রতিদিন আগের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বিশ্বের বড় বড় টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর কাছে টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের এই দাবির বিরোধিতা করেছে একাধিক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা।

এই দাবি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথেরিন টাই বলেছেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু এই মহামারি দূর করতে ভারতের প্রস্তাবে সায় দিচ্ছে আমেরিকা।’ তাঁর কথায়, ‘এখন বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার সংকট তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে। যত দ্রুত সম্ভব বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে আমাদের।’

বিশ্বের কিছু ধনী দেশ নিজেদের হাতে টিকার স্বত্ব ধরে রেখেছে বলে আগেও অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই স্বত্ব তুলে নেওয়ার জন্য অনেক দেশ বাইডেন সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম। তিনি বলেছেন, কোভিড অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। বাকি ধনী দেশগুলোকেও আমেরিকার পথে চলার আবেদন করেছেন তিনি।

ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রস্তাবে সমর্থন করেছে কেনিয়া, মোজাম্বিক, পাকিস্তান, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, মঙ্গোলিয়া, জিম্বাবুয়ে, মিসর, আফ্রিকান গ্রুপ ও এলডিসি গ্রুপ। এর পাশাপাশি মালদ্বীপ, ফিজি, নামিবিয়াসহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ৬০টি সদস্যদেশ এই প্রস্তাবে সমর্থন করে।

এর আগে ৩০ এপ্রিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ট্রেড রিলেটেড আসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটসের (ট্রিপস) এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ৫-৬ মের বৈঠকে এ নিয়ে পরবর্তী আলোচনা হবে। এবার সেই বৈঠকেই যুক্তরাষ্ট্র সায় দিল। তবে কেবল যুক্তরাষ্ট্র সায় নয় ট্রিপসের বাকি সদস্যদেরও সমর্থন লাগবে এই প্রস্তাব কার্যকর হতে। একটি দেশ দ্বিমত করলেও তা কার্যকর হবে না। এরপর তা জেনারেল কাউন্সিলে অনুমোদিত হবে।

সর্বজনীন টিকা

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন মূলত ধনী দেশগুলোর মানুষেরা টিকা পাচ্ছে। তাতে অনেকটা কাজও হচ্ছে। তবে গরিব দেশগুলো এই টিকা না পেলে বিশ্বের সিংহভাগ মানুষ অরক্ষিত থেকে যাবে। তাতে এই মহামারি আরও প্রলম্বিত হবে বলেই ধারণা করা যায়। এর মধ্যে আবার ভাইরাসের নতুন রূপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে টিকাদানে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, ততটুকু আবার হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সমাধান হচ্ছে জনগণের টিকা নিয়ে আসা-সবাই পাবে এবং সবার নাগালের মধ্যে থাকবে, এমন টিকা। বর্তমানে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে বৈষম্য বা একধরনের জাতিবিদ্বেষ তৈরি হচ্ছে, তা সমাধানের পথ করে দিতে পারে এই সর্বজনীন টিকা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কৃত্রিমভাবে টিকার স্বল্পতা তৈরি করা হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। কথা হচ্ছে, মেধা সম্পদের দাবি না থাকলে সারা বিশ্ব একসঙ্গে এই টিকা উৎপাদন করতে পারত। তাতে এ বছরের মধ্যেই বিশ্বের ৬০ ভাগ মানুষ এবং ২০২২ সালের মধ্যে যারা চায় তাদের সবাইকে এই টিকা দেওয়া সম্ভব ছিল, এক হিসাবে দেখা গেছে।

কিন্তু ধনী দেশগুলো টিকা এবং ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রযুক্তি মজুত করে রাখায় এই স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে অনেক দেশের অনেক কোম্পানি এই টিকা বানাতে প্রস্তুত, কিন্তু অপেক্ষা শুধু ফর্মুলার। সে কারণে তারা কাজ শুরু করতে পারছে না সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও। তারা টিকা বানাতে পারলে আরও অনেক মানুষ টিকা পেত এবং ধনী দেশগুলোর ওপর গরিবদের নির্ভরশীলতা কমত। স্বাস্থ্যগত এই জরুরি অবস্থায় এটা দরকার ছিল বলে বিশ্লেষকদের মত।