অভ্যুত্থানের ঠিক আগে মিয়ানমারকে বিপুল অঙ্কের সহায়তা দেয় আইএমএফ

অভ্যুত্থানের ঠিক আগেই মিয়ানমারকে বড় ধরনের আর্থিক সাহায্য বা সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কোভিড সহায়তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে নগদ দেওয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ডলার। জরুরি সহায়তা প্যাকেজের আওতায় লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় এই অর্থ পাঠিয়েছে আইএমএফ। এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কোনো শর্ত নেই।

এর কয়েক দিন পরই দেশটির সামরিক বাহিনী আবারও ক্ষমতা দখল করেছে। বন্দী করা হয়েছে অং সান সু চিসহ অন্য গণতান্ত্রিক নেতাদের। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আইএমএফ কি এই টাকা ফেরত চাইবে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শর্তহীন এই টাকা ফেরত নেওয়া আইএমএফের পক্ষে কঠিন।

আইএমএফের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ঘটনাক্রমের ওপর আমরা নজর রাখছি। অর্থনীতি ও জনগণের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ একই সঙ্গে তিনি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, গত সপ্তাহে এই টাকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আইএমএফ কি এই টাকা ফেরত চাইবে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শর্তহীন এই টাকা ফেরত নেওয়া আইএমএফের পক্ষে কঠিন।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কেবলই ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। মিয়ানমারের এই সেনা অভ্যুত্থানকে বিশ্লেষকেরা তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মিয়ানমারকে সহায়তা করার ব্যাপারটা পর্যালোচনা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র আইএমএফের বৃহৎ অংশীদারদের অন্যতম। গত সাত মাসে জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে আইএমএফ মিয়ানমারকে ৭০ কোটি ডলার দিয়েছে, গত সপ্তাহের ৩৫ কোটি ডলারসহ।

আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ স্টেফানি সেগাল রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসিত কর্মসূচির জন্য এই টাকা দেওয়া হয়নি। এই টাকার তেমন শর্তও নেই। আর একবার টাকা দেওয়ার পর আইএমএফ আবার টাকা ফিরিয়ে নিয়েছে, এমন নজির আছে কি না, আমার জানা নেই।’

আরও পড়ুন

শর্ত না থাকায় জরুরি সহায়তার টাকা যেকোনো কাজেই ব্যবহার করা যায়। সে জন্য এই টাকার ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে এক ধরনের উদ্বেগ আছে। তবে সে রকম কিছু আবার না–ও ঘটতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিয়ানমারের নতুন সরকার আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে না। সে জন্য এই টাকার যথাযথ ব্যবহার তারা করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আশা, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাত স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারবে। যদিও গতকাল মঙ্গলবার, অর্থাৎ ক্যুর পরপরই দেশটির সামরিক জান্তা থান নিয়েনকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছে। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে যখন সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখনো এই থান নিয়েন কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই গভর্নর ছিলেন। আইএমএফ সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই সরাসরি কাজ করে।

এদিকে বিশ্বব্যাংক মহামারির পর থেকে ১৫ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে দেশটির উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা।