ক্ষতি এক হাজার কোটি টাকা

  • মোংলা বন্দরে পড়ে আছে ২ হাজার ৮৩৪টি গাড়ি।

  • নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১ হাজার ১০০ গাড়ির।

  • নতুন আসা গাড়ির মধ্য থেকে প্রতিদিন ৯০-১০০ গাড়ি ছাড় করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

করোনার কারণে এপ্রিল–মে মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ছিল। এ কারণে সে সময় কোনো গাড়ি বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া আমদানি করা গাড়িগুলো বন্দরে আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মাশুলও গুনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীরা।

আর্থিক সংকটের কারণে মোংলা বন্দরে পড়ে থাকা আমদানি হওয়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ির নিলাম এক বছরের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। পাশাপাশি সংকট উত্তরণে ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলেরও দাবি করেছে ব্যবহৃত বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

রাজধানীর বিজয়নগরে নিজস্ব কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন বারভিডার নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি মোহা. সাইফুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বেনজির আহমেদ প্রমুখ।

মোংলা বন্দরে পড়ে থাকা আমদানি হওয়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ির নিলাম এক বছরের জন্য স্থগিত চায় বারভিডা

গাড়ির নিলাম স্থগিত রাখার দাবির বিষয়ে বারভিডা সভাপতি বলেন, ‘মোংলা কাস্টম হাউস সম্প্রতি এক আদেশের মাধ্যমে দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ি নিলামে বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদেশে কোনো গাড়ি একবার নিলামের জন্য তালিকাভুক্ত হলে উচ্চ আদালতের আদেশ ছাড়া আমদানিকারকেরা তা ছাড় করাতে পারেন না। এ কারণে ব্যবসায়ীদের করোনাকালের আর্থিক ক্ষতি ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মানবিক কারণে মোংলা বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ির নিলাম কার্যক্রম ১ বছরের জন্য স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দরে থাকা গাড়িগুলোর নিলাম করা হলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মোংলা কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বন্দরটিতে ২ হাজার ৮৩৪টি আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ গাড়ি নিলামে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আসছে বন্দরে। আবার প্রতিদিন ৯০-১০০ গাড়ি শুল্ক দিয়ে ছাড় করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হক বলেন, করোনার বিপর্যয় থেকে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সহায়ক পদক্ষেপ। তবে বারভিডার সদস্যরা এই প্যাকেজের আওতায় কোনো ঋণসুবিধা পাননি। অথচ বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন গাড়ি ব্যবসায়ীরাও।

বারভিডা জানায়, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৪০টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে কোনো গাড়ি আসেনি। তার আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১২ হাজার ৫০২টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। আমদানি হওয়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ি থেকে বিদায়ী অর্থবছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা।

নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বৈষম্য দূর করার দাবি জানান বারভিডার নেতারা। তাঁদের দাবি, আমদানি করা নতুন গাড়ির শুল্কায়ন হয় ঘোষিত মূল্যে। কিন্তু চালানে উল্লিখিত মূল্য ধরে শুল্কায়নের সুযোগ থাকায় সরবরাহকারী ও আমদানিকারকের যোগসাজশে সুবিধামতো দাম ঘোষণার সুযোগ রয়েছে। এতে সরকার অনেক কম শুল্ক-কর পেয়ে থাকে। অন্যদিকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি শুল্কায়নে জাপানের সরকারি প্রতিষ্ঠান জাপান অটো অ্যাপ্রাইজাল ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত ইয়োলো বুকের নতুন দামের ভিত্তিতে শুল্কায়ন হয়। এই মূল্য পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাতে চার-পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ করা হচ্ছে। দাম বেড়ে যাচ্ছে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির। অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে অনেক ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাই নতুন ও পুরোনো গাড়ির শুল্ক ও করবৈষম্য যৌক্তিক করা প্রয়োজন।

পরিবেশদূষণ রোধে ইউরো ৫ মানদণ্ডের নিচের গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি করেন আবদুল হক। তিনি বলেন, জাপান থেকে যেসব গাড়ি আমদানি হয়, সেগুলো ইউরো ৫ বা তার উঁচু মানদণ্ডের। অন্যদিকে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার নামীদামি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো ইউরো ২ বা ৩ মানদণ্ডের। এসব গাড়ি বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে, যা জাপান থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চেয়ে বেশি পরিবেশদূষণ করছে।