গুজবে আতঙ্কিত মিয়ানমারের ব্যাংক গ্রাহকেরা

ছবি: এএফপি

অভ্যুত্থানের পরে মিয়ানমারের ব্যাংকগুলোয় অর্থের ঘাটতি তৈরি হয়েছে—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে সেই গুজব আরও জোরালো হয়েছে ব্যাংক থেকে প্রতিদিন নগদ উত্তোলনের নতুন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে, বুথে বুথে গ্রাহকেরা ভিড় করছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্য রাজনীতিকদের আটকের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে যে বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি চলছে, সামরিক জান্তা তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মিয়ানমারের সামরিক–নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি ব্যাংক ‘বয়কট’ চাপের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে মায়াওয়াদি একটি। ব্যাংককর্মীসহ নানা অফিসের কর্মচারীরা কাজ বর্জন করেছেন। আগামী শুক্রবার মাসিক বেতনের আগে সামরিক বাহিনীর অধীনে থাকা ব্যাংকিং খাত দখল করারও আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো আংশিক খোলা, এটিএম থেকে নগদ উত্তোলন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে গ্রাহকদের জন্য। এই অনিশ্চয়তা নগদ ঘাটতির উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

৩৩ বছর বয়সী তুন নাইং নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, মায়াওয়াদির ব্যাংকে তাঁর হিসাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার ডলার রয়েছে। সেই অর্থ তুলতে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। মিয়ানমারের ষষ্ঠ বৃহত্তম ব্যাংক মায়াওয়াদি।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই ব্যাংকের প্রতিটি শাখা থেকে প্রতিদিন মাত্র ২০০ জন গ্রাহক অর্থ তুলতে পারবেন। অর্থ তোলার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে গ্রাহকপ্রতি ৩৭০ ডলার। তুন নাইং বলেন, কিছু লোক ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য রাত থেকে বসে থাকেন। অনেকে ব্যাংকের পাশের হোটেলে উঠেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাইন্ট মাইন্ট এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, এখনো অর্থ তুলতে পারেননি তিনি। এএফপিকে তিনি বলেন, তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র-পরিচালিত মিডিয়ার মাধ্যমে অন্তত ঘোষণা তো করা উচিত যে আমাদের অর্থ ঠিক আছে। যদিও আমার সঞ্চয় বেশি নয়, তারপরও গুজবের কারণে আমি চিন্তিত।’

এদিকে ইয়াঙ্গুনজুড়ে ব্যাংকগুলোর অনিয়মিত কার্যক্রম চললেও মিয়ানমারের সরকারি সংবাদপত্র নিউ লাইটের একটি বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে যে এখনো দৈনন্দিন পরিষেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের আগেই করোনাভাইরাস মহামারি এবং লকডাউনের কারণে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ছিল মিয়ানমারের অর্থনীতি। এর মধ্যে অভ্যুত্থানের পর সরকারি কর্মচারীদের কাজ বর্জন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে—এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ অভ্যুত্থানের পর দেশটির প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করেছে। ফিচ এর কারণ হিসেবে ‘ব্যাপক রাজনৈতিক ঝুঁকি’ বিষয়টি উল্লেখ করেছে।