চীনের জিডিপিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির তিন পূর্বাভাস

ছবি: রয়টার্স

২০২১ সালে চীনই হবে বিশ্বের সমন্বিত মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি এ বছর জিডিপিতে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চলেছে। বিশ্বব্যাংক আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পর এবারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, চলতি বছর চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থাটি বিদায়ী ২০২০ সালে চীনে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। চীনের অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক আর্টিকেল ফোর পর্যালোচনার পর এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

চীন থেকে করোনার শুরু হলেও দ্রুত তা সামলে নেয় দেশটি। অন্য দেশগুলোর চেয়ে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সবার আগে স্বাভাবিক হয়। অর্থনীতি দিন দিন গতিশীল হয়ে উঠছে। সেই সুবাদে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে আইএমএফ।
আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির ধকল কাটিয়ে চীনের অর্থনীতি এখন দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। দ্রুত নীতি-পদক্ষেপ নিয়ে সে অনুযায়ী জোরেশোরে প্রচেষ্টা চালানোর ফলে দেশটি কোভিড-১৯ সংকটের প্রভাব কমেছে।
আইএমএফের নির্বাহী পরিচালকেরা মনে করেন, নীতিনির্ধারকেরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কোম্পানিগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে এবং রাজস্ব প্রণোদনা দিয়েছে।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতিমালাগুলো দেশটির অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। অর্থনীতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আর্থিক ও রাজস্ব প্রণোদনার নীতিগুলো অব্যাহত রাখার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ। তারা বলছে, যেহেতু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চলছে, সেহেতু অস্থায়ী পদক্ষেপগুলোর জায়গায় স্থায়ী নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ঋণ সমস্যার সমাধা হয় এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ও তদারকি কার্যক্রম জোরদার থাকে।

নির্বাহী পরিচালকেরা চীনকে ‘হুকৌ রিফার্ম’ নামের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে আর্থিক খাত আরও উন্মুক্ত করা এবং শ্রমের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিতের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, কাঠামোগত সংস্কার চীনের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতা হ্রাস, চাপ সামলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতির সঞ্চার এসব ত্বরান্বিত করবে।

বিদায়ী বছরের নভেম্বরেও আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল যে বিশ্বে চীনই হবে একমাত্র অর্থনীতি, যারা ২০২০ সালে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। তখন আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেন, ‘সার্বিকভাবে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে চীনই সামনে টেনে তুলছে। চীনের প্রবৃদ্ধি ছাড়া ২০২০ ও ২০২১ সালে বৈশ্বিক জিডিপিতে সমন্বিত প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে।’

এর আগে গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক তাদের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চীনে ২০২১ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানায়, বিদায়ী ২০২০ সালে চীনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ।

অন্যদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জানায়, চলতি ২০২১ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও সংস্থাটি ঠিক একই হারে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছিল। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা চীনের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে বলেও সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে। এডিবি ২০২০ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ১ শতাংশ হয় বলে প্রাক্কলন করেছিল। সংস্থাটি গত সেপ্টেম্বরে অবশ্য ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছিল চীনের জন্য। সূত্র: সিজিটিএন।