চীনের ব্যাংকে রয়েছে ট্রাম্পের সচল অ্যাকাউন্ট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে চীনের ব্যাংকে তাঁর একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই ব্যাংক হিসাবটি এখনো সচল। অবশ্য ট্রাম্পের আইনজীবী জানান, সেটি এখন আর ব্যবহার করা হয় না।

ওই ব্যাংক হিসাবটি নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলস ম্যানেজমেন্ট। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তারা স্থানীয় পর্যায়ে ওই ব্যাংক হিসাব দিয়ে আয়কর দিয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাম্পের এক মুখপাত্র জানান, এটি এশিয়ায় হোটেল ব্যবসায়ের সম্ভাব্য সুযোগ সন্ধানের জন্যই ওই হিসাব খোলা হয়েছিল। চীনা ব্যাংক হিসাব থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার স্থানীয় কর দেওয়া হয়।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়ে অন্যায্য সুযোগ নিচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে বছর তিন আগে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেন ট্রাম্প। চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হয়, প্রতিশোধ নিতে চীনও শুল্ক আরোপ করে। এভাবে চলে কাদা–ছোড়াছুড়ি। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে জানায়, তারা ট্রাম্পের আয়কর রেকর্ড হাতে পাওয়ার পর এসব তথ্য জানতে পারে। এতে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত এবং কোম্পানির আর্থিক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

এর আগে সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ফাঁস করে ট্রাম্পের আয়কর রেকর্ড। তাতে দেখা যায়, দুই বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরও অভিযোগ ওঠে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও কোনো আয়কর দেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন ২০১৬ সালে। সেই বছর এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে প্রথম বছর ২০১৭ সাল মিলিয়ে ট্রাম্প মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দেন।

আরও পড়ুন

এদিকে নিজে চীনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু রাখলেও আগামী ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর চীনা নীতির ঘোর সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। এমনকি চীনে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ব্যবসা নিয়ে আঙুল তুলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের এক আইনজীবী অ্যালান গার্টেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের আয়কর দেওয়ার জন্য ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলস ম্যানেজমেন্ট চীনের একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তবে ২০১৫ সাল থেকে সেটি দিয়ে কোনো বাণিজ্য, লেনদেন বা অন্য কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়নি। ওই ব্যাংক হিসাবটি এখনো সচল থাকলেও সেটি আর কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা ধরনের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। স্কটল্যান্ডে ও আয়ারল্যান্ডে তাঁর গলফ কোর্স রয়েছে, আছে পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেল চেইন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, বিদেশে, বিশেষ করে চীনে, যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশের ব্যাংকে ট্রাম্পের ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে ব্যবসায়ের লক্ষ্যে ২০১২ সালে সাংহাইয়ে একটি অফিস খোলেন ট্রাম্প। নিইইয়র্ক টাইমস ট্রাম্পের যে আয়করের রেকর্ড হাতে পেয়েছে তাতে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে চীনে বিশেষ প্রকল্পের জন্য ৫টি ছোট কোম্পানিতে ট্রাম্প বিনিয়োগ করেছেন কমপক্ষে ১ লাখ ৯২ হাজার ডলার। এসব কোম্পানি ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ হাজার ৪০০ ডলার খরচ দেখিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আয়করের মতো ছোটখাটো খরচ এবং অ্যাকাউন্টিং ফি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা ধরনের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। স্কটল্যান্ডে ও আয়ারল্যান্ডে তাঁর গলফ কোর্স রয়েছে, আছে পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেল চেইন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, বিদেশে, বিশেষ করে চীনে, যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশের ব্যাংকে ট্রাম্পের ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

আমাদের চীনের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে হবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

গত আগস্টে চীন থেকে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরে আসার জন্য ট্রাম্প আয়কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন। এমনকি যেসব মার্কিন প্রতিষ্ঠান চীনকে কাজের আউটসোর্স হিসেবে ব্যবহার করবে তাদের সঙ্গে সরকার চুক্তি বাতিল করবে—এমন হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এক বক্তব্যে তিনি ১০ মাসের মধ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের চীনের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে হবে।’