ট্রাম্পের কলঙ্ক কি মোচন করতে পারবে তাঁর ব্যবসা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এমন একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর নাম জপতেন কর্মীরা। তবে চার বছর পর পরিস্থিতি যেন একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর প্রেসিডেন্টের ব্র্যান্ডটি তাঁর নামের জন্যই কলঙ্কিত হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে তাঁর ব্যবসা।

ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তাঁর অনেক ঘনিষ্ঠজন। যার মধ্যে রয়েছে সিগনেচার ব্যাংক, যেখানে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রয়েছে। রয়েছে মার্কিন পিজিএ, যারা ট্রাম্পের নিউ জার্সি গলফ কোর্সে ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা করেছিল। যে ডয়েচে ব্যাংকের কাছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণী ট্রাম্প, তারাও ট্রাম্পের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে।
এ–জাতীয় ঘোষণাগুলো কেবল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে ট্রাম্পের অবস্থানই নির্দেশ করে না। সেই সঙ্গে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস মহামারিতে জর্জরিত ট্রাম্পের ব্যবসার জন্য আরও ক্ষতি বয়ে আনছে।

২০১৫ সালের ট্রাম্পের জীবনী লিখেছিলেন মাইকেল ডি'অ্যান্টোনিও। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের নাম সত্যিই অ্যালবাট্রস। ৬ জানুয়ারির ওই ঘটনা তাঁর ব্র্যান্ডের খেলাই পাল্টে দিয়েছে। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে লাঞ্ছিত প্রেসিডেন্ট। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ইউএস ক্যাপিটলে আক্রমণকারী জনতার সমার্থক।’

ট্রাম্পের নানামুখী কলঙ্ক তাঁর কোম্পানির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিম ক্যালকিন্স। তিনি বলেন, ওই বিশৃঙ্খলার কারণে ট্রাম্পের ব্র্যান্ড দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ট্রাম্প ধন, সাফল্য এবং সর্বোপরি বিলাসবহুল এক জীবনে ছিলেন। এখন তাঁর ব্র্যান্ড সরকারবিরোধী মতামত, বর্ণবাদ এবং চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত। এটি ব্র্যান্ডকে মোটামুটি বিষাক্ত করে তুলেছে।

তবে এ ব্যাপারে ট্রাম্পের কোম্পানির মন্তব্য পায়নি বার্তা সংস্থা এএফপি। তবে গত অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ডয়েচেতে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার আমার নিট সম্পদের একটি ক্ষুদ্র শতাংশ। ট্রাম্পের দাবি, বিশ্বজুড়ে তাঁর থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মোট মূল্যমান ১ হাজার কোটি ডলার হবে।’ তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পকে তাঁর ডয়চে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য বর্তমান সম্পদ বিক্রি করতে হতে পারে।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই ব্যবসায়িক অনেক বিষয়ে ট্রাম্পকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নিউইয়র্কের সোহোতে একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এ রকম আরও অনেক ছোটখাটো ক্ষতির মুখে পড়েন ট্রাম্প। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ায় ট্রাম্পের সামগ্রিক ব্যবসায়িক ক্ষতি কতটুকু, তা অনুমান করা সত্যিই শক্ত। যেমন ট্রাম্পের ছেলেরা ডন জুনিয়র ও এরিক এখন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন পরিচালনা করছেন। ট্রাম্পের নির্বাচন জয়কে লক্ষ্য নিয়ে নতুন এক হোটেল চেইনসহ নানামুখী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তবে ২০১৯ সালে তার অনেক কিছুই ভেস্তে যায়।

ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প হোটেল ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সম্পদের পাহাড় গড়েন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ কত—এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত জার্মান পত্রিকা ‘হান্ডেলসব্লাট’-এর বিবরণ অনুযায়ী, ২৫টি দেশের ৫০০ কোম্পানিতে ট্রাম্পের শেয়ার আছে। এসব কোম্পানির কার্যকলাপ, আয়-ব্যয় বা মুনাফা সম্পর্কে প্রায় কিছু জানা নেই। গণমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ২৫টি দেশে ট্রাম্পের ১৪৪টি কোম্পানি আছে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের অন্তত ১৮টি দেশে ১১১টি কোম্পানি আছে। ১৯৭১ সালে বাবার কাছ থেকে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের’ দায়িত্ব পান ট্রাম্প।