তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারে উঠেছে

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে—শেষমেশ এই আশা সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনসহ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে।

ছবি: রয়টার্স

মহামারির ধাক্কায় গত বছর এপ্রিল মাসে তেলের দাম নেমে গিয়েছিল প্রতি ব্যারেল মাইনাস ৩৭ ডলারে। অর্থাৎ ক্রেতা এক ব্যারেল তেল কিনলে তাঁকে উল্টো ৩৭ ডলার দিতে হয়েছে বিক্রেতাকে। এ ছাড়া ওপেকের সঙ্গে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কারণে তেলের বাজার কয়েক বছর ধরেই খারাপ।

তেলের মূল্য বা চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে অর্থনৈতিক তৎপরতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। অর্থনীতিতে গতি এলে স্বাভাবিকভাবে তেলের চাহিদা বাড়ে। আশার খবর হলো, তেলের দাম মহামারি-পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের ওপরে ছিল। নভেম্বর মাসের পর এই তেলের ফিউচার কনট্র্যাক্ট ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত এক মাসে তেলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক তেল বাজার বিশ্লেষক বন্দনা হরি বিবিসিকে বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে—শেষমেশ এই আশা সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনসহ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নানা তৎপরতায় তেলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে। বেড়েছে দাম। এ ব্যাপারে অবশ্য গত বছরের এপ্রিল মাসেই ঐকমত্য হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তেল উৎপাদকেরা সম্মিলিতভাবে ২১০ কোটি ব্যারেল উৎপাদন স্থগিত রেখেছে।

তবে উড়োজাহাজের জ্বালানির চাহিদা এখনো গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম। এখনো দেশে দেশে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বিমান চলাচল অনেক কম। তবে চাহিদা আবার অন্যদিক দিয়ে বেড়েছে। ব্যাপারটা হলো, মানুষ ঘরে থেকে কাজ করার কারণে খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ঘর থেকে কম বেরোলেও মানুষ ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে বিপুল কেনাকাটা করছে। ই-কমার্সের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্লাস্টিক প্যাকেটের চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর এই প্যাকেট তৈরিতে তেল ব্যবহৃত হয়।

তবে তেলের চাহিদা এখনো মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় কম। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা যদি দ্রুত না ঘোরে, তাহলে আরও বিপদ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত মাসে সতর্ক করে দিয়েছে, এতে আগামী দিনগুলোতে তেলের চাহিদা সেভাবে না-ও বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন, ২০২১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ শতাংশ। তবে সবকিছু নির্ভর করছে টিকাদানের ওপর। টিকা দিতে বিলম্ব হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আবার পিছিয়ে পড়তে পারে। তাতে তেলের চাহিদাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।