দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার পথে বিশ্ব অর্থনীতি

কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে। ফলে চলতি ২০২০ সালে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে পরের বছরেই অর্থাৎ ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ও আর্থিক সেবাদাতা বহুজাতিক কোম্পানি মরগ্যান স্ট্যানলি এমন আশা-নিরাশার কথা শুনিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলতি বছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে, মানে কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে তা আবার চাঙা হয়ে উঠবে এবং প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। তাতে আগামী বছর ভারত হবে এশিয়ার চতুর্থ সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ভারতের সামনের বাকি তিনটি দেশ হবে চীন ৯ দশমিক ২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও ফিলিপাইন ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।

মরগ্যান স্ট্যানলির এশিয়া ও উন্নয়নশীল বাজার বিভাগের প্রধান জোনাথন এফ গার্নার বলেন, বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম বিশ্ব সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে। তবে নীতিমালা শিথিল করার সুবাদে বিভিন্ন দেশের জিডিপি দ্রুতই আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ জন্য অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই তাঁদের প্রাক্কলনে বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমবে বলে জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ও আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকস, ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান মুডি এবং জাপানভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নোমুরাও গত কয়েক সপ্তাহে তাদের দেওয়া পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার উল্লেখ করে বৈশ্বিক জিডিপির হার কমবে বলে জানিয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহে বলেছে, কোভিড ১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি খারাপ হয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্বকে এখন মনে করতে হবে আর্থিক বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।

সংস্থাটি গত ১৪ এপ্রিল তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছিল, চলতি বছরে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ কমবে। এপ্রিলের ওই পূর্বাভাসে আইএমএফ তিনটি বিকল্প পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিল। সেগুলো হচ্ছে ১. প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাব থাকবে। ২. আগামী ২০২১ সালে ভাইরাসটি আবার দেখা দিতে পারে এবং ৩. দুটোই ঘটতে পারে।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস আয়োজিত এক অনুলাইন অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিদেশি অর্থায়ন বাবদ সম্ভবত ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা লাগবে। এর আগে সপ্তাহ তিনেক আগে আইএমএফ উন্নয়নশীল দেশগুলৌর জন্য আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল। এক ট্রিলিয়নে এক লাখ কোটি।

সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও ব্লুমবার্গ।