ধনী আমেরিকানরা যেভাবে কর ফাঁকি দেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

অভিযোগ উঠেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কর ফাঁকি দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও কোনো আয়কর দেননি।  প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২ বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার ফেডারেল আয়কর দেন ট্রাম্প। দুই দশকের বেশি সময়ের ট্যাক্সের বিবরণী থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।
ট্রাম্পের মতো অনেক ধনী মার্কিন নাগরিকই কর ফাঁকি দেওয়ার নিত্য নতুন পন্থা নেন। কর ফাঁকি দেওয়া যে দেশটিতে অবৈধ এতে কোনো বিভ্রান্তি নেই, তবে কর এড়িয়ে যাওয়া সেভাবে অবৈধ নয়, যদিও অনেকেই এটিকে অন্যায্য বলে মনে করেন। গত রোববার ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর ওই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে ট্রাম্পের কর শুল্ক কমানোর অনেক কৌশল প্রকাশিত হয়েছে। তবে ট্রাম্প একা নন, কর এড়াতে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের চেয়ে ধনী করদাতাদের বেশি উপায় থাকে। গবেষকেরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) তথ্য অনুসারে ধনী আমেরিকানরা হলেন অপ্রদর্শিত আয়ের বৃহত্তম উৎস। ন্যাশনাল ট্যাক্স জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শীর্ষস্থানীয় আমেরিকান করদাতাদের মধ্যে প্রায় ১ শতাংশের কাছে অপ্রদর্শিত আয়ের ৩৪ শতাংশ রয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

এই কর ফাঁকি দিতে ধনীরা মার্কিনরা যেটা করেন তা হলো, করের দায়বদ্ধতা হ্রাস করার জন্য জটিল, গোপনীয় তবে সম্পূর্ণ আইনি কৌশল নেন। কেউ কেউ মোটামুটি সরল কৌশল নেন, যা তাঁদের ট্যাক্স কোডের আওতায় কর কমিয়ে দেয়। ‘ইউএসএ টুডে’র এক প্রতিবেদনে কিছু উপায়ের কথা বলা হলো।

বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি

বিনিয়োগের চেয়ে বেতন যাচাইয়ের ওপর কর এড়ানো অনেক বেশি শক্ত। সাধারণভাবে, ফেডারেল সরকার বিনিয়োগ করা আয়ের চেয়ে স্থির মজুরির ওপর করের হার বেশি আরোপ করে। মূলধন থেকে আসা লাভের ওপর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ কর হয়, অন্যদিকে আয়কর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যদি একজনের বেতন ১০ লাখ ডলার হয়, সরকার ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার কর আরোপ করবে। আর যদি তিনি বিনিয়োগ বা স্টকের মধ্যে ১০ লাখ ডলার লাভ করেন, আপনার তাঁর কর হবে ২ লাখ ডলার।

কৌশলগত সময়ে সম্পদ বিক্রি

স্টক বা আবাসনের বিনিয়োগের ওপর কর সাধারণ সেটি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আরোপ করা হয় না। এই কৌশলগত নিয়মের মাধ্যমেই জেফ বেজোস, আমাজনের সিইওর মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনীরা বিশাল কর এড়িয়ে তাঁদের সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারেন। এগুলো বিক্রি করার ক্ষেত্রে কৌশলগত সময় অবলম্বন করেন তাঁরা। বিক্রি না করে সম্পদ মজুত করে ধনী বিনিয়োগকারীরা তাঁদের করের বোঝা হ্রাস করতে পারেন। ২০১৩ সালে ১ শতাংশ ধনী আমেরিকানের হাতে এই ধরনের মূলধনের এক-তৃতীয়াংশ ছিল।

ব্যক্তিগত করের দায়বদ্ধতা হ্রাস করতে ব্যবসায়ের আয়ের ফাঁকগুলো ব্যবহার করা

২০১৮ সালে ট্রাম্প যে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন তাতে দেখা গেছে, তিনি ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছেন। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ দাবি করছে, তাঁর আয়করবিষয়ক নথিতে দেখানো হয়েছে তিনি ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বেশি লোকসান করেছেন। হোয়াইট হাউসে প্রথম ২ বছর তিনি ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছেন, যার উৎস যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কোনো দেশ। এসব দেশের মধ্যে ভারত, তুরস্ক ও ফিলিপাইনের নাম উঠে এসেছে। এমনকি ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামে একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য তিনি ৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাঁর নাম ব্যবহার করবে, সে জন্যও তিনি ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছেন। এসব আয়ে তিনি কর দেননি বলে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ দাবি করছে।

আরও পড়ুন

উত্তরাধিকারীদের জন্য ডেথ ট্যাক্স নীতিমালার সুযোগ গ্রহণ

ট্যাক্স কোডের মাধ্যমে মার্কিন ধনীরা মূলধনের লাভ মুলতবি রাখতে পারেন। এভাবে তাঁরা সম্পদ বাড়াতে পারেন। আর তাঁদের মৃত্যুর পর সেই সম্পদ যখন উত্তরাধিকারীরা পান, তাঁদের কর দিতে হয় না। এটিকে কর বিরতির ‘স্টেপড আপ ভিত্তি’ বলা হয়। এই ফাঁকফোকরের কারণে অনেক ধনী ব্যক্তি তাঁদের আয়ের সর্বাধিক পরিমাণ মূলধনের লাভে পরিণত করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা সম্পদ হিসেবে ধরে রাখেন।