নিত্যপণ্য আমদানিও কমছে, খরচ বেড়েছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির উৎস কমেছে। তাতে কমে গেছে আমদানির পরিমাণ। তার বিপরীতে অবশ্য আমদানি খরচ বেড়েছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে আমদানিনির্ভর নানা পণ্য কিনতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ৫ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে থাকা এ দেশের সাধারণ মানুষও ভুক্তভোগী হচ্ছে যুদ্ধের কারণে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। ওই যুদ্ধ শুরুর পর ১ মার্চ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ৭টি পণ্যের আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্যের আমদানি কমেছে গড়ে ১৯ শতাংশ। এই সাতটি পণ্য হলো সয়াবিন ও পাম তেল, গম, চিনি, মটর ডাল, মসুর ডাল ও ছোলা। এসব পণ্যের আমদানি কমলেও আমদানিতে আগের বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি গড়ে সাড়ে ১২ টাকা খরচ বেড়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, খুচরা বাজার থেকে ক্রেতারা এই সাত পণ্য কেনার সময় এক বছর আগের তুলনায় গড়ে ৪৪ শতাংশ বেশি দাম দিচ্ছে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিরতা চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর একের পর এক দেশ নিজেদের খাদ্য সুরক্ষায় রপ্তানি বন্ধ ও সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নেয়। এতে বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশের বাজারেও পণ্যমূল্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে।

গম ও ডালজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের সব কটির দাম অনেক দিন ধরে বাড়তি, যেটি আগে কখনো দেখা যায়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হলে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতেও আপৎকালীন মজুত বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে দেশে ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখা জরুরি।

দেশে নিত্যপণ্যের মধ্যে গম ও মটর ডাল আমদানি হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। দুই দেশের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশ দুটি থেকে এই দুটি পণ্যের আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আবার দেশ দুটি থেকে নিত্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বজুড়েও দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।

বাংলাদেশে গমের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে আমদানি করে। যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারত থেকে আমদানি শুরু করেন আমদানিকারকেরা। তা সত্ত্বেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যশস্যের আমদানি কমেছে ১৭ শতাংশ। আবার প্রতি কেজিতে খরচ বেড়েছে ছয় টাকার বেশি।

যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম। গত আড়াই মাসে প্রতি লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানিতে গড়ে খরচ পড়েছে ১২২ টাকা, যা আগের তুলনায় ৩৩ টাকা বেশি। একইভাবে প্রতি লিটার পাম তেল আমদানিতেও ১১১ টাকা খরচ পড়েছে, যা আগের তুলনায় ৩৩ টাকা বেশি।

আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমদানি কমলেও খুব অস্বস্তিকর পর্যায়ে যায়নি। অস্বস্তিকর পর্যায়ে যাওয়ার আগেই পণ্য আমদানি বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী।