পাল্লা ভারী ভুটানের দিকে

বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটান। প্রথম পিটিএ সই হয়েছে এ দেশের সঙ্গেই। এতে বাণিজ্যসুবিধা বেশি পাবে ভুটান।

  • বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জাসামগ্রী, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়।

  • ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে।

পিআইডির সৌজন্যে

বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে যে বাণিজ্য হয়, তাতে ভুটানই বেশি এগিয়ে। বাংলাদেশ ১০ বছর আগেও ভুটানে যা রপ্তানি করত, এখনো রপ্তানি বলতে গেলে তা–ই। আর রপ্তানির ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি পণ্য আমদানি করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল ভুটানে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। আর ভুটান থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ১ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪ কোটি ২১ লাখ ডলারে।

উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান এখন আরও বাড়বে, এটা মেনে নিয়েই গতকাল রোববার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই করেছে বাংলাদেশ ও ভুটান। কোনো দেশের সঙ্গে এটিই বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। অনুষ্ঠানে গতকাল নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ভুটান প্রান্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দর্জি, বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় চূড়ান্ত বিজয় আসার আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভুটান। তারিখটির কথা স্মরণ করে একই দিনে উভয় দেশ পিটিএ সই করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে এলডিসি হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কিছুটা কমবে।

পিটিএ পর্যন্ত কীভাবে এল

পিটিএ সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাণিজ্য ব্যবধান ভুটানের পক্ষে থাকলেও বাংলাদেশ ভুটানকে ২০১০ সাল থেকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের ৯০টি পণ্য শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাচ্ছে ভুটানে। ভুটান আরও কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে আসছিল। এরপর থেকেই পিটিএর আলোচনা এগোয়।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং (যিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন) ২০১৯ সালের ১২-১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে এলে এ–বিষয়ক আলোচনা জোরেশোরে চলতে থাকে। এরপর ওই বছরের ২১-২৩ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক হয়। এরপর করোনার প্রকোপ চলাকালীন গত ১৯ জুন হয় দ্বিতীয় বৈঠক। গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত পিটিএর খসড়ায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পিটিএ হওয়ার পর বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে মোট ১০০টি পণ্যে এবং ভুটান বাংলাদেশে মোট ৩৪টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবে। পরবর্তী সময়ে আলোচনার মাধ্যমে আরও পণ্য সংযুক্ত হবে তালিকায়। এ চুক্তির মাধ্যমেই বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের যাত্রা শুরু হলো।

বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জাসামগ্রী, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়। ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে।

ভুটান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পাথর আমদানি করা গেলে বাংলাদেশে নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় কমবে। এ ছাড়া স্বল্প মূল্যে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।