প্রতিপক্ষকে গোপনে টাকা দিতেন চেলসি মালিক

ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপে লিস্টন হোল্ডিংস নামের এ অফশোর কোম্পানির পেছনে আছেন এই রোমান আব্রামোভিচ। ফিনসেন ফাইলসে প্রকাশিত। প্রতিপক্ষকে গোপনে টাকা দিতেন চেলসি মালিক।তবে রোমান আব্রামোভিচের আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি আইনের লঙ্ঘন করেননি।

রোমান আব্রামোভিচ
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচ অন্য ক্লাবের ফুটবলারদের ওপরও গোপনে বিনিয়োগ করে থাকেন। এই খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন পেরুর উইঙ্গার আন্দ্রে কারিয়ো, যিনি ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগে চেলসির বিপক্ষে খেলেছিলেন। আর এই বিনিয়োগ তিনি করেছেন ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপের অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে।

তবে রোমান আব্রামোভিচের আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি আইনের লঙ্ঘন করেননি। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান লর্ড ট্রিসম্যান অবশ্য একটি ফুটবল ক্লাবের মালিকের অন্য ক্লাবের খেলোয়াড়ের ব্যাপারে আগ্রহ থাকা ঠিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিবিসি প্যানোরমার হাতে ফিনসেন ফাইলসের যে নথি এসেছে, তাতে দেখা যায়, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপে লিস্টন হোল্ডিংস নামের এক অফশোর কোম্পানির পেছনে আছেন এই রোমান আব্রামোভিচ। এই লিস্টন অন্য দেশের ফুটবলারদের ওপর বিনিয়োগ করতে তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করেছে। মূলত এর মাধ্যমে দুর্দশাগ্রস্ত ক্লাবের খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ ট্রান্সফার ভ্যালুর একটি অংশ কেনা হয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২০০৮ সালেই এই রীতি নিষিদ্ধ হয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ২০১৫ সালের আগে তা নিষিদ্ধ হয়নি।

২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের যে খেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি ছিল চেলসির সঙ্গে স্পোর্টিং লিসবনের। ক্যারিলো হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে দুই ম্যাচেই খেলেছিলেন। তাই সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ওই দুটি ম্যাচে আব্রামোভিচের ১২ জন খেলোয়াড়ের ওপর বিনিয়োগ ছিল।

লর্ড ট্রিসম্যান বিবিসি প্যানোরমাকে বলেছেন, ‘তৃতীয় পক্ষের মালিকানাকে আমরা যথাযথ মনে করি না বলে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে খেলা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। যেসব নথিপত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে, তাতে সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে আমি তদন্ত চাই।’ এদিকে জানা গেল, আব্রামোভিচ চেলসি ক্লাবে আবারও বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ব্যাংক রোমান আব্রামোভিচের নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সাসপিশাস অ্যাকটিভিটি রিপোর্ট (এসএআর) দাখিল করে। তারা কাগুজে অফশোর কোম্পানির সংশ্লিষ্টতায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি লেনদেন চিহ্নিত করে। এসএআরে বলা হয়, এই কাগুজে কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির মালিক রোমান আব্রামোভিচ—রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের খুবই ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি। সেই টাকা এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির হিসাবে ঘুরেছে।

প্রতিপক্ষকে গোপনে টাকা দিতেন চেলসি মালিক।
ছবি: রয়টার্স

২০১১ সালে লিস্টন হোল্ডিংস আন্দ্রে কারিয়োর প্রাপ্য অর্থের অর্ধেক লাভ করে। লিস্টন পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনকে আলিয়াঞ্জা লিমা থেকে খেলোয়াড় কেনার জন্য ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঋণ দেয়। তৃতীয় পক্ষের মালিকানার ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব ধারা থাকে, এই চুক্তিতেও সে রকম কিছু ধারা ছিল।

এতে বলা হয়, কারিয়োর জন্য ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ পাউন্ডের ট্রান্সফার মানি প্রস্তাব করা হলে লিসবন যদি তা মানে, তাহলে লিস্টনকে এই প্রস্তাবের ৪৫ শতাংশ ফেরত দিতে হবে। আর লিসবন বলে, কারিয়ো যত বছর ক্লাবে খেলেছে, তার প্রতিবছরের জন্য লিস্টনকে ১ লাখ ২৭ হাজার ইউরো দিতে প্রস্তুত—ঝুঁকিমুক্ত।

ফিনসেন ফাইলস ফাঁস
ছবি: আইসিআইজের সৌজন্যে

পর্তুগিজ ক্লাব লিসবনের হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ মৌসুমে লিস্টন তাদের কাছে ২৬ লাখ ইউরো পেত। শুধু কারিয়ো নয়, গায়েল এটোক ও ভ্যালেন্তিন ভিয়োলাকেও কিনেছিল লিস্টন।

সাবেক ফুটবলাররা অবশ্য এই ধরনের চুক্তিকে খেলার নৈতিকতাবিরোধী বলে মনে করেন। তবে আব্রামোভিচের আইনজীবী বলেন, এই লেনদেন সন্দেহজনক, কিন্তু এই নয় যে তা ওই সময়ের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী ছিল।

ইসরায়েলের এলাদ গোষ্ঠীকে অর্থায়ন
ফুটবলারদের নিয়ে সন্দেহজনক এই লেনদেনের বাইরে আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো, তিনি ইসরায়েলের বিতর্কিত সেটলার গোষ্ঠী এলাদকে বিপুল টাকা দিয়েছেন। ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপের এক অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে তিনি প্রায় ১০ কোটি ডলার দিয়েছেন এই এলাদ গোষ্ঠীকে।