বাজেটে নজর করোনা, কৃষি ও ভোটে

ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে কোভিড, কৃষক বিদ্রোহ এবং চার বড় রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন।

  • কোভিড প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ ।

  • ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি।

  • ‘আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য কর্মসূচি’ প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে ৬৪ হাজার ১৮০ কোটি রুপি। এই অর্থ ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পে বরাদ্দের অতিরিক্ত হিসেবে খরচ করা হবে।

  • পশ্চিমবঙ্গে ২৫ হাজার কোটি রুপি খরচে তৈরি করা হবে ৬৯৫ কিলোমিটার হাইওয়ে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাজেটে কোভিড প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করলেন।
ছবি: এএফপি

চলতি আর্থিক বছরে যে তিন বিষয় সরকারকে ব্যতিব্যস্ত ও ব্যস্ত রেখেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেগুলো বিশেষ গুরুত্ব পেল। ব্যতিব্যস্ত রেখেছে কোভিড ও কৃষক বিদ্রোহ, ব্যস্ত রেখেছে চার বড় রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাজেটে কোভিড প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করলেন। প্রয়োজন হলে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান। সোমবার বাজেট পেশের সময় তিনি বলেন, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি।

দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল কেমন, কোভিড অতিমারি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে, তা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। অর্থমন্ত্রী সেই প্রত্যাশা অনুযায়ীই বাজেট তৈরি করেছেন। গত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৪৫২ কোটি রুপি। সে জায়গায় এবার ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ হয়েছে। নির্মলা জানান, সদ্য চালু করা ‘আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য কর্মসূচি’ প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে ৬৪ হাজার ১৮০ কোটি রুপি। এই অর্থ ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পে বরাদ্দের অতিরিক্ত হিসেবে খরচ করা হবে।

ভারতে ব্যাপকভাবে করোনার টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং এই অতিমারির বিরুদ্ধে যাঁরা সরাসরি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছেন, তেমন ৩ কোটি মানুষকে সরকার বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া শুরু করেছে। পরের ধাপে থাকছেন প্রবীণদের পাশাপাশি ‘কোমর্বিডিটি’ থাকা নবীন নাগরিকেরা। দেশে এই মানুষের সংখ্যা অন্তত ২৭ কোটি। এদেরও বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হবে কি না, সরকার তা এখনো জানায়নি। মোট টিকাকরণে ৮০ হাজার কোটি রুপি প্রয়োজন বলে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্তা আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত না জানিয়ে বলেন, কোভিডের টিকা বাবদ ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

অর্থমন্ত্রী আরও জানান, দেশে বর্তমানে দুটি টিকার প্রয়োগ হচ্ছে। শিগগিরই আরও দুটি টিকা বাজারজাত করা হবে। তার একটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘নোভাভ্যাক্স’। সেরাম ইনস্টিটিউট এই টিকা ‘কোভাভ্যাক্স’ নামে বাজারে ছাড়বে। ভারতে প্রস্তুত দুটি টিকা ‘কোভিশিল্ড’ ও ‘কোভ্যাক্সিন’ অন্তত ১০০ দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে করোনার মোকাবিলা সরকারের প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকলে দ্বিতীয় চিন্তা অবশ্যই কৃষক বিদ্রোহ। নতুন কৃষি আইন নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে। দিল্লির সীমান্ত গত ৭০ দিন ধরে অবরুদ্ধ। এর মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রীর নির্দিষ্টভাবে কিছু করার প্রয়োজন ছিল। নির্মলা সীতারমণের বাজেট সেদিকে নজর দিয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াবে সাড়ে ১৬ লাখ কোটি রুপি। সরকারের ‘জাতীয় ডিজিটাল কৃষি বিপণন’ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আরও ১ হাজার মান্ডিকে সংযুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, শুধু গমের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয়েছে ৭৫ হাজার ১০০ কোটি রুপি। এতে উপকৃত হয়েছেন ৪৩ লাখ গম উৎপাদনকারী কৃষক, যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ৭ লাখ বেশি। মান্ডি ব্যবস্থা যে দুর্বল করা হচ্ছে না, তা জানাতে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি অবকাঠামো তহবিলের দায়িত্ব মান্ডির হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। অবকাঠামো ও ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প বাবদ বাড়তি অর্থ দিয়ে ওই তহবিল মোট ৫০ হাজার কোটির করা হবে।

সরকারের চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে চার বড় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে ভোট আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও কেরালায়। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে আসাম ছাড়া কোথাও বিজেপির সরকার নেই। বিজেপি বিপুলভাবে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে। তা ছাড়া তামিলনাড়ুতে তারা গাঁটছড়া বেঁধেছে এআইএডিএমকের সঙ্গে। জয়ললিতার মৃত্যুর পর এই প্রথম ভোটযুদ্ধ। শাসক এআইএডিএমকের কাছে তাই এবারের ভোট বড় চ্যালেঞ্জ। কেরালায় বিজেপি তৃতীয় শক্তি। কিন্তু নজরে রয়েছে সেই রাজ্যও।

ভোটযুদ্ধে বাজেটকে হাতিয়ার করতে মোদি সরকার তাই কুণ্ঠিত হয়নি। চার রাজ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগসহ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের কথা ঘোষিত হয়েছে। তামিলনাড়ুর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার কোটি রুপি। কেরালায় সড়ক উন্নয়নে ধার্য হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি। আসামে আগামী তিন বছরের জন্য বরাদ্দ ৩৪ হাজার কোটি। পশ্চিমবঙ্গে ২৫ হাজার কোটি রুপি খরচে তৈরি করা হবে ৬৯৫ কিলোমিটার হাইওয়ে। এ ছাড়া আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের চা–শিল্পের উন্নতিতে বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি।