বিশ্বের শীর্ষ তিন ব্যাংক ডাকাত উত্তর কোরিয়ার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে তিন উত্তর কোরীয় নাগরিক হ্যাকিং ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাঁরা ১৩০ কোটি ডলার চুরি বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আদায় করেছেন বলে রায়ে বলা হয়েছে। বুধবার এক রায়ে এসব কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকেররিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গেও তাঁরা জড়িত বলে রায়ে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, তিনজন উত্তর কোরীয় নাগরিক—জন চ্যাং হিওক, কিম ইল ও পার্ক জিন হিয়ক—অনেক দিন ধরে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা শাখার হয়ে কাজ করছেন। বস্তুত, উত্তর কোরিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে তাঁরা গত কয়েক বছরে বড় বড় হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কখনো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাঁরা হামলা চালিয়েছেন, কখনো কখনো স্রেফ আর্থিক কারণে হামলা করেছেন। তাঁরা বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংক ডাকাত। ফোর্বস ম্যাগাজিনের সংবাদে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মূলত সাইবার হামলার মধ্য দিয়ে তাঁরা বড় বড় অপকর্ম করেছেন। রায়ে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, মেক্সিকো, মাল্টা ও আফ্রিকা থেকে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তাঁরা ১২০ কোটি ডলার হ্যাকিং মারফত আত্মসাৎ করেছেন।

এ ছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে হানা দিয়েও তাঁরা অনেক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বলা হয়েছে, এই হ্যাকারদের হানা দেওয়ার প্রিয় এক জায়গা হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। ম্যালিশাস বা ক্ষতিকর ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ ছেড়ে দিয়ে এই অদৃশ্য ডিজিটাল মুদ্রার জগতে তাঁরা হানা দিত। ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডিজিটাল মুদ্রার জগতে হানা দিয়ে তাঁরা ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেন।

এ ছাড়া এই হ্যাকাররা ব্লকচেইনের জগতেও হানা দিয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ নিতে উত্তর কোরিয়া সরকারের হয়ে তাঁরা ভুয়া ব্লকচেইন ছেড়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞা এড়াতেও এসব কাজ করেছেন তাঁরা।
তবে রায়ে বলা হয়েছে, এই সব হ্যাকিংয়ের পেছনে যে শুধু আর্থিক লাভ-ক্ষতির হিসাব কাজ করেছে তা নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিশোধ নিতে হামলা করা হয়েছে। যেমন ২০১৪ সালে সনি পিকচার্স এন্টারটেইনমেন্টে প্রচারিত ছবি দ্য ইন্টারভিউয়ে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। প্রতিশোধ হিসেবে এই হ্যাকাররা সিন পিকচার্সে সাইবার হামলা চালান।

এই তিন ব্যক্তি এখন কোথায়, তা কেউ জানে না, কিন্তু এফবিআইয়ের ভাষ্যমতে, তাঁদের সবাইকে সর্বশেষ উত্তর কোরিয়ায় দেখা গেছে।

মার্কিন বিচার বিভাগের ভাষ্যমতে, ২০১৮ সালে এই তিন হ্যাকারের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সাপেক্ষে এই রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের সঙ্গে এফবিআই অভিযুক্ত তিন হ্যাকারের বিরুদ্ধে ওয়ান্টেড নোটিশ জারি করেছে। সবার বিরুদ্ধেই ডিজিটাল জালিয়াতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে ষড়যন্ত্রের আরেক অভিযোগে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এদিকে কিম জং-উন পারমাণবিক কর্মসূচি আরও জোরালো করবেন বলে ঘোষণা দেওয়ার পর বাইডেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।