ব্যবসার মূল ঝুঁকি সাইবার নিরাপত্তা

জরিপে অংশ নেওয়া ভারতীয় প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ ২০২২ সালের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী।

সূত্র: পিডব্লিউসি

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা। এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৭৭ শতাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করেন, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। মাত্র ১৫ শতাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করছেন, অর্থনীতি এবার দুর্বল হবে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর আশাবাদী প্রধান নির্বাহীর সংখ্যা বেড়েছে ১ শতাংশ। কিন্তু গত বছর ৫৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছিলেন, ২০২১ সালে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হবে।

প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সের বৈশ্বিক সিইও জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ৮৯টি দেশের ৪ হাজার ৪৪৬ জন প্রধান নির্বাহীকে নিয়ে এই জরিপ করা হয়। জরিপে প্রধান নির্বাহীরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাইবার হামলার ঝুঁকি।

তবে বিশ্বের সব দেশের প্রধান নির্বাহীরা একই সুরে কথা বলেননি। বড় দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ভারতের প্রধান নির্বাহীরা সবচেয়ে বেশি আশাবাদী। জরিপে অংশ নেওয়া ভারতীয় প্রধান নির্বাহীর মধ্যে ৯৪ শতাংশ ২০২২ সালের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ৮৮ শতাংশ। ভারতের মতো জাপানের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে আশাবাদ বেড়েছে। জাপানের ৮৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী চলতি বছরের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী। যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্সের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যেও আশাবাদ বেড়েছে। তবে এই বছর আশাবাদী প্রধান নির্বাহীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ফ্রান্সে—গত বছর ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশ।

অন্যদিকে আশাবাদী প্রধান নির্বাহীর সংখ্যা হ্রাসের হার সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে—১৮ শতাংশ কমে এবার মার্কিন আশাবাদী প্রধান নির্বাহীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে তাঁরা অতটা আশাবাদী না হলেও নিজের কোম্পানির ব্যবসা নিয়ে আশাবাদী। জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ মার্কিন প্রধান নির্বাহী রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। ভারতের প্রধান নির্বাহীরাও নিজেদের কোম্পানির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী।

গত বছরের মতো এবারও জরিপে অংশ নেওয়া প্রধান নির্বাহীরা ব্যবসার মূল ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাইবার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। ৪৯ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেন সাইবার ঝুঁকির কথা, আর ৪৮ শতাংশ বলেছেন স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা। সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিরতা নিয়েও কম শঙ্কা প্রকাশ করেননি প্রধান নির্বাহীরা; ৪৩ শতাংশ বলেছেন, এই অস্থিরতা বড় মাথাব্যথার কারণ। তবে সব অঞ্চল বা দেশের প্রধান নির্বাহীদের কাছে ঝুঁকি এক রকম নয়। অঞ্চলভেদে ভিন্নতা আছে।

পিডব্লিউসির বৈশ্বিক চেয়ারম্যান বব মরিৎজ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও প্রধান নির্বাহীদের এই আশাবাদ থেকে বোঝা যায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কতটা শক্তিশালী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও যে প্রধান নির্বাহীরা সবকিছু সামলে নিতে পারছেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাস দেখে তা বোঝা যায়। আমাদের এই পৃথিবীতে এখন স্বাভাবিক বলতে কিছু নেই, বরং বলা যায়, আমরা এই নতুন এই বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছি।’

এদিকে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জরিপে ক্রেতাদের আস্থা ও প্রধান নির্বাহীদের আত্মবিশ্বাসের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। যেসব কোম্পানির ওপর ক্রেতাদের আস্থা সবচেয়ে বেশি, সেসব কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর আত্মবিশ্বাসও বেশি, অর্থাৎ ২০২২ সালে তাদের কোম্পানির ব্যবসা ভালো হবে।