ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

শনিবার সন্ধ্যা। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যাংকোয়েট গমগম করছে। ভারতীয় শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর সঙ্গে সফরকারী সব সদস্য, দুই দেশের সপ্তম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যাঁদের অংশ নেওয়ার কথা। উপস্থিত দেশের অন্যতম প্রধান বণিক সভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) বড় কর্মকর্তারা। সেই সমাবেশে দেশের অগ্রগতির খতিয়ান তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তাঁর একান্ত নিজস্ব ভঙ্গিতে বোঝালেন, ভারতীয় শিল্পপতিদের আশু গন্তব্য কেন বাংলাদেশ হওয়া উচিত। প্রকৃত শিক্ষক যেমন গল্প বলার ঢঙে মনোযোগী পড়ুয়াকে বশীভূত করেন, ঠিক সেভাবে বাংলাদেশের অর্জন ব্যাখ্যা করে মোমেন বললেন, ‘সব সময় তাঁরাই বেশি লাভবান হন, সুযোগ গ্রহণে যাঁরা প্রথম তৎপর হন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের দরজা খোলা। আপনারা আসুন। সুযোগ নিন। লাভবান হোন।’

এ সময় মোমেনের সমর্থনে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। বণিক সভার সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। ২০১৬ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার, ২০২২–এ তা ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক সম্পর্কও চমৎকার। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনাদের ওপর।’ দোরাইস্বামীর শেষ বাক্যটি ছিল এ রকম, ‘ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী ঠিকানা হোক বাংলাদেশ।’

এই প্রথম সিআইআইয়ের সহযোগিতায় এভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হলো। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও সিআইআইয়ের অবকাঠামো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক চেয়ারম্যান বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁরা কর্মঠ ও সক্ষমতা প্রমাণে উদ্যোগী। আমরা তাঁদের হাতে কাজ দিতে চাই। সে জন্য বিনিয়োগ চাই। ভারতের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা নির্ধারিত রয়েছে। আপনারা বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে আপনারা যা কিছু উৎপাদন করবেন, তার বাজার বাংলাদেশেই রয়েছে। টাটা মোটরস, হিরো বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। আমরা চাই, অন্যরাও যেন পিছিয়ে না থাকেন।’

বিনিয়োগের এই আহ্বান আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মোমেন বলেন, এই একটি প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দেড় থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে। শিল্পপতিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রশ্ন আসতে পারে বিনিয়োগের জন্য কেন বাংলাদেশে যাবেন? প্রথম কারণ যোগাযোগব্যবস্থা। কানেক্টিভিটি ইজ প্রোডাক্টিভিটি। রেল, সড়ক, আকাশ, নদী, সাগর সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা চালু রয়েছে। আগামী দিনে দুই দেশের অভিন্ন সব নদীপথের যোগাযোগ চালু করার লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ সস্তা শ্রম। তৃতীয় কারণ শ্রমিকেরা দ্রুত শিখতে আগ্রহী। চতুর্থ কারণ পরিবহন খরচ কম। কোন কোন খাতে ভারতীয় উদ্যোক্তারা আগ্রহী হতে পারেন, সেই তালিকাও দিয়েছেন তিনি। বলেন, অটোমোবাইল, সিরামিক, সিমেন্ট, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, রেলসহ মেধাভিত্তিক (নলেজ বেজড) শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিআইআইয়ের অবকাঠামো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক চেয়ারম্যান বিনায়ক চট্টোপাধ্যায় জানান, বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইওদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করবেন।