মিয়ানমারের জিডিপি সংকোচন হবে ১৮ শতাংশ

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার।
রয়টার্স

আবারও সামরিক শাসনের কবলে পড়েছে মিয়ানমার। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে শুরু হয়েছে ত্রাসের রাজত্ব। চলছে লাগাতার রাজনৈতিক সহিংসতা। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২১ সালে দেশটির অর্থনীতি ১৮ শতাংশ সংকুচিত হবে।

আজ সোমবার প্রকাশিত মিয়ানমার ইকোনমিক মনিটর শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে মার্চে তাদের পূর্বাভাস ছিল, সংকোচনের হার দাঁড়াতে পারে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এর মধ্যেই পূর্বাভাস প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে এ–ও বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তাতে সংকোচনের হার আরও বাড়বে।

শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছে। জুনে ফিচ সলিউশনসের পূর্বাভাস ছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্য অর্থবছরে জিডিপির সংকোচন হতে পারে ২০ শতাংশ।

সামরিক শাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহামারির প্রভাব। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর প্রভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ফলে দেশটিতে এই দুর্যোগের প্রভাব ২০২২ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। জুলাই মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৪০০ জন। দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পরীক্ষার অপ্রতুল সুযোগ ও তথ্যপ্রবাহের ঘাটতির কারণে এ সংখ্যা অনেক কম বলেই ধারণা করা হয়।

কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালেও মিয়ানমারের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। এই পরিস্থিতিতে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান। এতে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ফলে কোভিড ও সামরিক অভ্যুত্থান না হলে মিয়ানমারের অর্থনীতির আকার বর্তমানে অন্তত ৩০ শতাংশ বড় হতো। বিশ্বব্যাংক বলছে, এর প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর।

মিয়ানমারবিষয়ক বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কিম অ্যালান এডওয়ার্ডস অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন, মহামারির কারণে চলতি বছর অর্থনৈতিক সংকোচনের হার আরও বাড়তে পারে। অনেক জায়গায় বিধিনিষেধ শিথিল হলেও জুলাই মাসের পর দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনমন ঘটতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বেকারত্ব বেড়েছে, কমেছে মানুষের আয়। ফলে চাহিদার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে। কারখানায় উৎপাদন কমেছে। আরও বলা হয়েছে, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

জুন মাসে ৫০০ কোম্পানির ওপর জরিপ করেছে বিশ্বব্যাংক। দুই-তৃতীয়াংশ কোম্পানি বলেছে, গত বছর কোভিডের যে প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে, এবার সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। অর্ধেকের বেশি কোম্পানি জানিয়েছে, জুন মাসে নগদ অর্থের ঘাটতি ছিল। অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে ৪০ শতাংশ কোম্পানির কর্ণধার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ঋণের জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ২৬ শতাংশ।

একই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে কৃষিপণ্যের দাম কমে গেছে। অন্যদিকে কৃষি সরঞ্জামের দাম বাড়লেও ঋণের সুযোগ সীমিত।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, শিল্প ও সেবা খাতের তুলনায় কৃষি খাতের সংকোচন কম হবে। কৃষির সংকোচন হবে ১০ শতাংশের ওপর আর শিল্প ও সেবার সংকোচন হবে ২০ শতাংশের ওপর।