মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় যুক্তরাজ্যে বছরে খরচ বাড়ছে ২ লাখ টাকা

ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে এখন করোনার পাশাপাশি মাথাব্যথার অন্যতম কারণ, মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। সম্প্রতি বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে আগামী বছরে যুক্তরাজ্যের একটি সাধারণ পরিবারকে আগের তুলনায় ১৭০০ পাউন্ড বেশি খরচ করতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৪ টাকা (প্রতি পাউন্ড ১১৪ টাকা ধরে)। অর্থাৎ মাসে প্রায় ১৬ হাজার ২৩২ টাকা।

সেন্টার ফর ইকনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) পরিচালিত প্যানোরামার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বড়দিন সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। এই বৃদ্ধি মূলত জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান খরচের পুরো পরিমাণ এখনো সুপারমার্কেট গ্রাহকদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। কারণ, সুপারমার্কেটগুলো এই উৎসবের সময় গ্রাহকের জন্য দাম না বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এমনকি নিজের পকেট থেকে অর্থ গুনতে হলেও তারা তা করছে। কারণ, এই সময়ে গ্রাহক হারানোর মতো ঝুঁকি তারা নিতে চাইছে না।

২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় দুই প্রাপ্তবয়স্ক এবং দুই শিশুর একটি সাধারণ পরিবার সপ্তাহে অন্তত ৩৩ দশমিক ৬০ পাউন্ড বেশি ব্যয় করবে। অর্থাৎ, মুদ্রাস্ফীতির কারণে বছরে ১৭০০ পাউন্ড বেশি যোগ হবে তাদের ব্যয়ে।

খাদ্য ও পানীয়, পোশাক এবং গৃহস্থালি সামগ্রীসহ সাধারণভাবে কেনা পণ্যের দামের ওপর ভিত্তি করে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিবিসি প্যানোরামা। অবশ্য এতে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির পরিষেবা খরচও অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া আছে পরিবহন খরচ, বেড়াতে যাওয়ার খরচের মতো বিষয়গুলো।

বিবিসি বলছে, ব্যয়ের ধরন আগের বছরগুলোর মতোই থাকবে। মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে থাকবে। বর্তমানে এই হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০২২ সালের বসন্তে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে, যা পরিবারের ব্যয়ের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

যেসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে, তার একটি সাধারণ তালিকা করেছে বিবিসি প্যানোরামা। এতে দেখা গেছে, মার্জারিনের (এক ধরনের মাখন) দাম ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, দইয়ের দাম ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ভেড়ার মাংসের দাম সাড়ে ৮ শতাংশ, মাখনের দাম ৬ দশমিক ৪ শতাংশ ও ফলের দাম ১ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে। এ ছাড়া বেশ কিছু বড়দিনের পণ্যের দাম বাড়বে, আবার অনেকগুলোর কমবে।

কেন দাম বাড়ছে

এক. তেল ও গ্যাসের চাহিদা বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে

দুই. অনেক পণ্যের ঘাটতি সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং দাম বাড়াচ্ছে

তিন. মহামারির সময় ব্যবসার জন্য সরকারি সহায়তা এখন শেষের পথে

চার. ব্যবসায়ীরা শ্রমিক নিয়োগে হিমশিম খাচ্ছেন। এটি আংশিকভাবে মহামারির কারণে এবং কিছুটা ব্রেক্সিটের জটিলতাও রয়েছে।

মানুষ কী ভাবছে

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় খাদ্য বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান বিড ফুডসের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু সেলি বলেছেন, বর্তমানে অবস্থা যতটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে, তার সঙ্গে তিনি কখনোই পরিচিত ছিলেন না।

নটিংহামশায়ারের নিকি রুশিন নামের এক নার্স বিবিসি প্যানোরামাকে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আমরা খাবারের বিষয়ে খুব সাবধানে ব্যয় করার চেষ্টা করি। বাজেট করি, চিন্তাভাবনা করে আমরা যা চাই, তা কিনতে পারি।’

সবজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টিএইচ ক্লেমেন্টের বাণিজ্যিক পরিচালক রিচার্ড মোব্রে জানান, তার ব্যবসা ইউরোপ থেকে মৌসুমি শ্রমিকের ঘাটতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।