মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ছে সোনার দামে

আবারও বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে টানা কয়েক দিন দাম বাড়ার পর দেশেও সম্প্রতি সোনার দাম বেড়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় কোমেক্স বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৮৬৮ দশমিক ৫০ ডলার। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহে সোনার দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।

বিশ্ব অর্থনীতির এখন প্রধান খবর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। লকডাউন তথা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর হঠাৎ দেশে দেশে চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা। এতে কাঁচামালের জোগান ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কমছে উৎপাদন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।

সংকটের সময় মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। ব্যাপারটা হলো, অনেকে যেমন গয়না বা অলংকার হিসেবে সোনা কেনেন, আবার অনেকেই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কেনেন। বিশেষ করে বিরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ও সুদের হার কর্তনের সিদ্ধান্তে সোনার দামে কোনো প্রভাব পড়ে না। দিন দিন পণ্যটির দাম বাড়ে—চিরকাল এমনটাই হয়ে আসছে। সে জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সারা পৃথিবীতে সব সময় সোনার কদর অটুট থাকে।

মূল্যস্ফীতির কারণে আয়ের একটি অংশ অনিচ্ছাকৃতভাবে খরচ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে এই সময়েই সামর্থ্যবান মানুষেরা আবারও সোনার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। তাতেই বাড়ছে সোনার দাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি চড়া থাকলে সোনার দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। এখন ঠিক এটাই ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম কিটকো নিউজ-এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, সেই দেশে ভোক্তা মূল্যসূচক এখন ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সে জন্য সোনার মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের রক্ষাকবচ হয়ে এসেছে। তারা সোনা কিনতে থাকায় এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। এখানেই শেষ নয়, ওয়ালস্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের ওপর পরিচালিত কিটকো নিউজ-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী মনে করছেন, এ সপ্তাহে সোনার দাম আরও বাড়বে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় দেশের বাজারেও সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের ১ ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৪ হাজার ৩০০ টাকা।

পশ্চিমা দেশগুলোতে বিয়ে বা বিশেষ উপলক্ষে সোনা কেনার চল না থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারতে এই প্রবণতা বেশ জোরালো। শীতকাল আসন্ন। শুরু হচ্ছে বিয়ের মৌসুম। ঠিক এমন সময় সোনার মূল্য বৃদ্ধি চাহিদায় কতটা প্রভাব ফেলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, বড় বড় কনভেনশন হল ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। যাঁরা বড় কনভেনশন হল ভাড়া করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁরা সাধারণত দেশের বাইরে কেনাকাটা করেন। তবে তিনি আশাবাদী, বিয়ের মৌসুমে ব্যবসা মন্দ হবে না।

দেশে সোনার মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদের দাম না বাড়িয়ে উপায় থাকে না। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় দেশের বাজারে দাম কম থাকলে সোনা পাচারের আশঙ্কা থাকে। তাই দাম বাড়াতেই হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক বাজারের যা হালচাল, তাতে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করেন তিনি।