১০ ধনীর করোনাকালের আয় দিয়েই বিশ্বের সব টিকা কেনা সম্ভব

ছবি: রয়টার্স

করোনার এই কালে শীর্ষ ধনীরা যে পরিমাণ আয় করেছেন, তা দিয়ে পুরো বিশ্বের জন্য এই ভাইরাসের টিকা কেনা সম্ভব। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্যই উঠে এসেছে। অক্সফাম বলছে, করোনার এই সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী যে পরিমাণ আয় করেছেন, তা বিশ্বের সব টিকা কেনার জন্য যথেষ্ট। এমনকি এই ধনীরা চাইলে করোনায় যাঁরা দরিদ্র হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে চরম দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারেন। সংস্থাটি সরকারগুলোকে অতি ধনী ব্যক্তিদের ওপর কর বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বিশ্বনেতাদের এক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ‘ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস’ নামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সহায়তা পেয়ে শক্তিশালী হয়েছে শেয়ারবাজার, যার কারণে ফুলেফেঁপে উঠেছে ধনীদের সম্পদ। তবে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দায় পড়েছে মূল অর্থনীতি। বিশ্বের এক হাজার ধনী ব্যক্তি মাত্র নয় মাসের মধ্যে তাঁদের কোভিড-১৯–এর ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন, অথচ বিশ্বের দরিদ্র মানুষকে মহামারিটির অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন, যা জি-২০ ভুক্ত সব দেশের মহামারি মোকাবিলায় যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার সমান।

২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৫৪০ ডলার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। অক্সফাম বলছে, শেয়ারবাজার ও ‘অনর্থক অর্থনীতির’ কারণে শত কোটিপতিদের ভাগ্য বেড়েছে, যা ‘এক শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক এই মন্দার’ বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে।

লকডাউনের কারণে ডিজিটাল পরিষেবা বাড়ায় ফুলেফেঁপে উঠেছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। যেমন জেফ বেজোসের কোম্পানি আমাজনের শেয়ারের মূল্য বেড়েছে হু হু করে। অথচ এতে শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বলা হচ্ছে, গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেফ বেজোস যে পরিমাণ বাড়তি আয় করেছেন, তা থেকে যদি আমাজনের ৮ লাখ ৭৬ হাজার কর্মীকেই ১ লাখ ৫ হাজার ডলার করে বোনাস দেন, তাহলেও তিনি মহামারির আগে যেমন ধনী ছিলেন, তেমনটাই থাকবেন।

অক্সফামের মনে করছে, করোনার কারণে নতুন করে অন্তত ৫০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের শিকার হয়েছেন, যা গত দুই দশকের উন্নয়নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতি ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অক্সফামের প্রধান নির্বাহী ড্যানি শ্রিসকান্দারাজাহ বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখন সম্পদ কর ও করপোরেশন কর বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে সমতা ফিরিয়ে আনতে আমূল কিছু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’