চাল ডিম তেল ময়দা সবকিছুর দাম বাড়তি

রাজশাহী নগরের সাহেববাজারে চাল কিনতে এসে যেন আকাশ থেকে পড়লেন জমিরউদ্দিন। তিনি ১০-১২ দিন আগে যে আটাশ চাল কিনেছিলেন ৫৫ টাকা কেজিতে, সেটি বেড়ে এখন ৬২ টাকা। তাই তিনি এক দোকান থেকে আরেক দোকানে গেলেন। কিন্তু কোনো লাভ হলো না তাঁর। ওই দরেই ১৫ কেজি চালের ফরমাশ দিয়ে জমিরউদ্দিন রাগে-ক্ষোভে বলে উঠলেন, ‘দেশটার সব শেষ হয়ে গেছে। ভাতই যদি না খেতে পারি, তাহলে ...।’

একই এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেলে ডিম কিনতে এসেছিলেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ। তিনি একটি মেসে থাকেন। মেস থেকে জেনে এসেছেন, সাদা ডিম ৩৬ ও লাল ডিম ৪০ টাকা হালি। কিন্তু বাজারে এসে দেখলেন, এই দুই কালারের ডিমে দাম বেড়েছে চার টাকা করে। চাল, ডিমের সঙ্গে ময়দার দামও কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে সময় লেগেছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়তে কিন্তু সময় লাগেনি। ব্যবসায়ীরা মুনাফার লোভে যা ইচ্ছা তা-ই করে যাচ্ছেন। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, চালের দাম চলতি আগস্ট মাসের শুরু থেকেই বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে প্রতি বস্তা (৫০ কজি) চালের দাম ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি সাদা আটা ৪৪ ও লাল আটা ৪৮ টাকা থেকে ৪ টাকা করে বেড়েছে। এই দাম আরও বেড়ে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।

নগরের কুমারপাড়া চালপট্টি এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ২০১৯ সালে যখন এখানে ব্যবসা শুরু করেন, তখন প্রতি বস্তা আটাশ চালের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা তিন বছরের ব্যবধানে এখন ৩ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এই সময়ে মানুষের আয় বাড়েনি। তাহলে এত দামে তারা কীভাবে চাল কিনবে?

কুমারপাড়া এলাকায় খাবার হোটেল চালান গোলাপ সরদার। তিনি গতকাল বিকেলে এই প্রতিবেদককে ময়দা কেনার রসিদ দেখিয়ে বলেন, ৫ আগস্ট প্রতি বস্তা ময়দা কিনেছিলেন ১ হাজার ৭৬৫ টাকায়, যা বেড়ে ৮ আগস্ট ১ হাজার ৮৬৫ টাকা হয়েছে। এখন তা ১ হাজার ৯১৫ টাকা। এভাবে ডিম, পাম তেল ও চালের দাম বেড়েছে। তাই দোকানেও খাবারের দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসান-আল-মামুন জানান, তাঁরা নিয়মিতভাবে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কি না, মূল্যতালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না এবং পাকা রসিদের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য আছে কি না, এসব তদারকি করেন। কেউ ব্যত্যয় ঘটালে ভোক্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার শক্ত অবস্থানে থেকে তদারকি জোরদার করলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে বাংলাদেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে মনিটরিং করতে হবে।