ব্যবসায়ী নয়, ভোক্তার স্বার্থে কাজ করব: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম

ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। এ জন্য চালু করা হবে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা। অর্থ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে এ ব্যবস্থাপনা করা হবে। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ নেন তিনি। শপথের পর দায়িত্ব পান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর। দায়িত্ব পাওয়ার পর আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে যান তিনি। কার্যালয়ে গিয়ে সকালে প্রথমে বৈঠক করেন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। দুপুরের পর কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, আমরা কাজ করব জনস্বার্থে, ভোক্তার স্বার্থে। সিন্ডিকেট শব্দ ব্যবহারে আমি অভ্যস্ত নই। তবে আপনারা যাদের “বিগ ফিশ” বলে থাকেন, সে রকম সিন্ডিকেট এখানে থাকতে পারবে না।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ব্যবসায়ীরা মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো কিছু উৎপাদন করে না। ভোক্তা যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পান, সেটা নিশ্চিত করা আমাদের কাজ। আমাদের দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসা। আর উৎপাদক বা আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনতে চাই। মানিকগঞ্জ থেকে রাতে আসা ফুলকপি দুপুরের মধ্যেই যেন গৃহিণীদের কাছে পৌঁছে। সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে কেউ বাজারে কারসাজি করার সুযোগ পাবে না, বেশি দামে পণ্য বিক্রি করারও সুযোগ পাবে না।’

পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করার সময় কোনো সিন্ডিকেট কারসাজি করতে পারেনি দাবি করে আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখি রমজান এলেই কিছু ব্যবসায়ী, আমি তাঁদের ব্যবসায়ী বলব না, তাঁরা আসলে অসাধু গোষ্ঠী। ব্যবসার নামে তারা অপকর্ম করে। আমাদের সব বিভাগ এ বিষয়ে সচেতন থাকবে। কেউ কোনো কারসাজি করে সরকারকে বিপদে ফেলার চিন্তা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাদের সঙ্গে বসব। অনুরোধ করব স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে। তখন তাদের সহযোগিতা করব, নইলে না।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে তিনটি পণ্য সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আহসানুল ইসলাম বলেন, কাজটি সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ডিজিটাল কার্ড হচ্ছে। ২০ লাখ কার্ড হয়ে গেছে। জুনের মধ্যে সব কার্ড দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানিতে পোশাক খাতের ওপর অনেক নির্ভরশীলতা আমাদের। রপ্তানিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পোশাক খাতের মতো একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাটশিল্পকেও দিতে হবে। কারণ, পোশাকের চেয়ে এ দুই শিল্পে মূল্য সংযোজন বেশি।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা হবেন আমার চোখ ও কান। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আর চাই, কোনো দাতাগোষ্ঠী যেন কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ না পায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হচ্ছে বলেও জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগামী জুনের মধ্যে এ ব্যাপারে অনুমোদন দেওয়ার কথা। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে পুঁজিবাজারে মানসম্পন্ন নিত্যপণ্যের লেনদেন হবে, তাতে এসব পণ্যের দাম সম্পর্কেও প্রতিদিন জানতে পারবেন ভোক্তারা।