চালু হলো আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার

জ্বালানি তেলফাইল ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার কার্যক্রম শুরু করেছে। ডিজেল ও উড়োজাহাজের তেলের জন্য এই শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে নাইজেরিয়ায়। এটি নির্মাণে বিনিয়োগ করেছেন মহাদেশটির সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। শোধনাগারের মালিক কোম্পানি বলেছে, এটি নাইজেরিয়ার জন্য একটি বিশেষ দিন।

ড্যানগোট রিফাইনারিতে প্রতিদিন সাড়ে ছয় লাখ ব্যারেল তেল শোধন করতে পারবে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই শোধনাগার নাইজেরিয়ার জ্বালানি খাতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। এটি পুরো সক্ষমতায় কার্যক্রম শুরু করলে তেল আমদানির ওপর নাইজেরিয়ার এখন যে নির্ভরতা, তার অবসান ঘটতে পারে।

নাইজেরিয়ার শতকোটিপতি আলিকো ড্যানগোট এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি মাসেই তেলজাত পণ্য বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কবে নাগাদ এটি পূর্ণ সক্ষমতায় চলবে কিংবা এটি পেট্রল শোধনের কাজ শুরু করবে।

দেশটির সবচেয়ে বড় শহর লেগোসের ঠিক বাইরে লেকি ফ্রি জোনে সাড়ে ছয় হাজার একর জমির ওপর এই তেল শোধনাগারটি অবস্থিত। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এটি নির্মাণে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে।

ড্যানগোট পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোম্পানিটি ডিজেল ও উড়োজাহাজের তেলের উৎপাদন শুরু করেছে। এটি নাইজেরিয়ার জন্য একটি বিশেষ দিন। এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছাতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

নাইজেরিয়া বিশ্বের অন্যতম বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ। একই সঙ্গে তারা আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। কিন্তু দেশটিকে তার জ্বালানি চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এর কারণ হলো, তেল শোধন করতে যে সক্ষমতা দরকার, তা নাইজেরিয়ার নেই।

পেট্রলের জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে অপরিশোধিত তেল বিনিময় করে নাইজেরিয়া। প্রতিবছর দেশটি যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল বিনিময় করে, তার মূল্য শত শত কোটি ডলার। এই পেট্রল আবার দেশটি ভর্তুকি মূল্যে জনগণের কাছে বিক্রি করে। উদ্দেশ্য, দেশের অভ্যন্তরে তেলের দাম কমিয়ে রাখা।

তেলের এই আমদানি ও ভর্তুকির কারণে নাইজেরিয়া প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে। ফলে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি রয়েছে, আর তেল থেকেও যথেষ্ট রাজস্ব আয় করতে পারছে না।

এই তেল শোধনাগার ২০২১ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল। এরপর গত বছরের শুরুতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি এটির উদ্বোধন করেন। তখন কথা ছিল, জুন মাসে এটি উৎপাদনে যাবে।

গত মে মাসে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু জ্বালানির ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেন। এরপর অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনি দেশটির মুদ্রা নাইরাকে ভাসমান করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই সংস্কার প্রয়োজন।