ওএমএসের চালে সংসার চলে শিল্পীর

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা শিল্পীর পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাঁর স্বামী সবুজ মিয়া। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে সবুজ মাসে সাকল্যে আয় করেন ১০ হাজার ২০০ টাকা।

অন্যদিকে শিল্পীর সংসারের মাসিক ব্যয়ের হিসাব অনেকটা এমন—বাসাভাড়া ৫ হাজার ৫০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮ বছর বয়সী ছেলের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, চিকিৎসা ও ওষুধ বাবদ খরচ অন্তত ১ হাজার ২০০ টাকা, বাকি ২ হাজার দৈনন্দিন বাজার ও অন্যান্য খরচ বাবদ।

বোঝাই যাচ্ছে, এই টাকা দিয়ে শিল্পীর সংসার ঠিকভাবে চলে না। এ জন্য প্রতি সপ্তাহেই কম দামের খোলাবাজারের পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ট্রাক থেকে চাল ও আটা কিনতে লাইনে দাঁড়ান তিনি। প্রথম আলোকে শিল্পী বলেন, ‘বাজার থেকে বেশি দামের চাল কেনার সামর্থ্য আমার নেই। ওএমএসের এই চাল দিয়েই আমার সংসার চলে।’

কয়েক বছর আগে মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন শিল্পী। তবে প্রথম সন্তানের জন্মের পর থেকে তিনি মেরুদণ্ডের ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য বাইরে কাজ করতে পারেন না। স্বামীর স্বল্প আয়েই চলে তাঁর সংসার। তাই টানাটানির সংসারে ওএমএসের চাল যেন শিল্পীর জন্য আশার আলো।

তবে ওএমএসের লাইনে দাঁড়ানো আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিল্পীর জন্য যেন এক যুদ্ধ। তিনি জানান, আজ সোমবার সকাল ৬টায় স্থানীয় চলন্তিকা বস্তি এলাকার ওএমএসের ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসেন তিনি। সেখানে সিরিয়াল দিয়ে আবার বাসায় ফেরেন। স্বামী-সন্তানের জন্য খাবার প্রস্তুত করে ৯টার দিকে এসে আবার লাইনে দাঁড়ান। তবে আগের দেওয়া সিরিয়ালে আর দাঁড়াতে পারেননি।

বাধ্য হয়ে লাইন ছেড়ে ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন শিল্পী। তিন ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারেন তিনি, তা-ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে বিশেষ বিবেচনায় তাঁর কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। চাল ও আটা কিনতে শিল্পীকে প্রতি সপ্তাহেই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।

শিল্পীর মতো আরও তিনজন অন্তঃসত্ত্বা নারী গতকাল চলন্তিকা বস্তি এলাকায় ওএমএসের পণ্য কিনতে যান। এক-দুই মাসের ছোট শিশুকে নিয়ে আসেন কয়েকজন নারী। এ ছাড়া দিনমজুর, গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার নিম্ন আয়ের মানুষেরা সেখানে পণ্য কিনতে আসেন।

মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তি এলাকার বাসিন্দা আবদুল বারেক বলেন, ‘মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়াতে পারি না, অনেক সময় লাইনে দাঁড়ালেও নিজের পালা আসার আগেই পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যায়। চার সপ্তাহ ধরে চাল-আটা কেনার জন্য ঘুরছি। আজ নিতে পেরেছি।’

নিম্ন আয়ের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য চাল ও আটা খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। কিন্তু বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন ওএমএসের সারি প্রতিদিনই বড় হচ্ছে। কম দামে পণ্য কিনতে এখন মধ্যবিত্তরাও ওএমএসের সারিতে ভিড় করছেন।

ওএমএসের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দামে চাল ও আটা বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও ২ কেজির প্যাকেটজাত আটা ৫৫ টাকা, প্রতি কেজি খোলা আটা ২৪ টাকায় বিক্রি করছে তারা। ওএমএসের ট্রাক থেকে এক ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটা কিনতে পারেন—মূল্য ২০৫ টাকা। বাজার থেকে সমপরিমাণ চাল ও আটা কিনতে ৪০০ টাকার মতো লাগে।