ব্যবসায় খরচ কমানোর দাবি জানালেন ব্যবসায়ী নেতারা

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ড লাইসেন্সের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান তাঁর সংগঠনের ত্রৈমাসিক মধ্যাহ্নভোজসভায় ফুল দিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামকে স্বাগত জানান। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এমসিসিআই কার্যালয়েছবি: এমসিসিআইয়ের সৌজন্যে

আবারও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের পাশাপাশি ব্যবসার খরচ কমানোর দাবি জানালেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলেছেন, নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ড লাইসেন্সের প্রক্রিয়াও সহজ করা দরকার। এ ছাড়া সরকারের বাজার তদারকিতে ভালো ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) আয়োজিত বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক মধ্যাহ্নভোজসভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। এই ভোজসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। গতকাল বুধবার মতিঝিলে এমসিসিআই কার্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ভোজসভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান।

ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, সহসভাপতি সিমিন রহমান, পরিচালক উজমা চৌধুরী প্রমুখ।

এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব এখন টালমাটাল। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। ব্যবসার খরচ কমানোর জন্য আমরা অনেক দাবি জানিয়েছি। অনেক পরামর্শও দিয়েছি। তবে নতুন কোম্পানি আইন প্রয়োজন। তিন দশক আগের আইনটি সময়োপযোগী করা দরকার।’

এমসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘দেশের বাজারে পণ্যমূল্য নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ব্যাপার নয়। তবে আমরা উদ্বিগ্ন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। খোলাবাজারে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বস্তি পেতে পারে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানো হলে আমদানি ব্যয় কমবে। তাতে পণ্যমূল্য কিছুটা কমতে পারে।’ পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি।

রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হলেও খুব একটা কাজ হয়নি। এ জন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে—এমন মন্তব্য করেছেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর। তিনি আরও বলেন, রমজান এলেই ভোক্তা অধিকার ও ম্যাজিস্ট্রেটরা কোমর বেঁধে নামেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত হলে তা যাঁরা নৈতিকতা মেনে ব্যবসা করেন, তাঁদের জন্য ভালো। আমরা চাই যাঁরা অনৈতিক ব্যবসা করেন, তাঁদের সারা বছর ধরা হোক।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে নিহাদ কবীর বলেন, ‘দেশের বড় একটি শিল্পগোষ্ঠী সম্প্রতি একটি পণ্য আমদানি করে। পণ্যটির শুল্কায়ন নিয়ে মতবিরোধ হলে তারা ট্রাইব্যুনালে যায়। ট্রাইব্যুনাল গ্যারান্টি নিয়ে সাত দিনের মধ্যে পণ্য ছেড়ে দিতে নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এনবিআর সেটি করেনি। অনেক সময় আমরা এনবিআরের যথাযথ সহায়তা পাই না। আমরা তখন আপনার কাছেই (বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী) আসব।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। কীভাবে এটিকে সহনীয় মাত্রায় আনা যায়, তা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, সেটিও ভাবতে হবে। রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপনা। আমরা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছি। আগামী ১ মার্চ থেকে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবেন। উৎপাদনস্থলের পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশিং করে বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিয়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। আমরা চাই পণ্যের সরবরাহ যেন যথেষ্ট থাকে, কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে।’

এনবিআরের প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এনবিআর একটু কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর চারটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর চিঠি দিয়েছিলাম। সেটি পেতেও আমাকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে।’ বাণিজ্য সংগঠনের উদ্দেশে তিনি বলেন, নব্বই দশক বা তার আগের বাণিজ্য সংগঠন অনেকটা যুদ্ধের মতো মনোভাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি করে দাবিদাওয়া আদায় করত। এখন দর–কষাকষি অনেকটা নমনীয় হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো অনেক সরকারবান্ধব হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দর–কষাকষিটা থাকতে হবে।