উত্তরা ফাইন্যান্সের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত

পরিচালকদের ঋণ অনিয়মের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্সের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে নতুন পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাদ পড়বেন বর্তমান পর্ষদের পরিচালকেরা। নতুন পরিচালকদের সবাই হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত আর্থিক চিত্র জানতে বিশেষ নিরীক্ষা করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্য থেকেই উত্তরা ফাইন্যান্সের নতুন চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরা ফাইন্যান্সের বেশির ভাগ পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির টাকা তাঁরা নিজেদের হিসাবে নিয়ে খরচ করেছেন। ফলে তাঁদের রেখে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নেই। এ জন্য বর্তমান পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজারের মার্জিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা জমা হয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্সের বিভিন্ন পরিচালকের ব্যাংক হিসাবে। কোনো ধরনের আবেদন, প্রস্তাব বা অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির হিসাব থেকে পরিচালকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর বাইরে উত্তরা মোটরস ও উত্তরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে কোনো অনুমোদন ছাড়া।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু লেনদেনের নথিপত্রও খুঁজে পায়নি, তাই সেসব লেনদেন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। ভালো মানের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের ঘটনায় পুরো খাতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এসব অনিয়মের জন্য গত জুনে উত্তরা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একসময়কার ভালো মানের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়ে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪১ টাকা থেকে কমে নেমে আসে ৩৪ টাকায়।

সংকটে পড়ায় কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। আবার আমানতকারীদের জমানো টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এ জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমনিতেই দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আবার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের কারণে নতুন করে সমস্যায় পড়েছে আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নতুন করে এখন উত্তরা ফাইন্যান্স নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল উত্তরা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিনহাজ আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।