ধীরগতির পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের 

আহসান মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এ সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। আমার মতে, এটা কম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল নীতি সুদহার দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট থেকে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়ানো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যও খুব বেশি সফল হবে বলে আমার মনে হয় না। 

নীতি সুদহার আরও বাড়াতে হবে, সে কথাও এখনই বলে দেওয়া উচিত। তাতে ডলারের বাজারটা স্থিতিশীল হবে। নীতি সুদহার বাড়ানো হলে মানুষের ডলার কেনার ক্ষমতা কমে যাবে, তাতে রিজার্ভও বাড়বে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পুশি-ফুটি (বিড়ালের মতো ধীর গতিতে এগিয়ে যাওয়া) পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ এ মুহূর্তে দরকার ছিল বাঘের মতো লাফ দেওয়ার মতো পদক্ষেপ। 

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা অনেক আগে থেকেই নীতি সুদহার বৃদ্ধির ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু দেরিতে হলেও সেটি এখন মানা হচ্ছে। তবে সেটি করা হচ্ছে দ্বিধা নিয়ে। পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এত দ্বিধা থাকলে তা আমাদের আরও ভোগাতে পারে। অর্থনীতির স্বার্থে এখন দরকার হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং মুদ্রা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি অবাস্তব। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের আরও উচ্চাভিলাষী হতে হবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। আমাদের মাথায় রাখতে হবে ভারতের মূল্যস্ফীতি কত, ইউরোপের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি কত। তাদের মূল্যস্ফীতি এখন ২ থেকে ৩ শতাংশ। কোনোভাবেই দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকতে দেওয়া যাবে না। টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, মূল্যস্ফীতি কমলে এ অবমূল্যায়নও কমবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ালে ঋণের সুদহারও বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। আমার প্রশ্ন, সুদের হার যখন কম ছিল, তখন কি বিনিয়োগ বেড়েছে? অনেকে বলতে পারেন, নতুন সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তা সত্ত্বেও ছয় মাসের জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বেশি সুদের হার তেমন কোনো বিষয় নয়।


আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)