সংবাদপত্রশিল্পের শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব নোয়াবের

নোয়াব নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ২% ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ৫%–এ নামিয়ে আনা এবং সংবাদপত্রশিল্পে করপোরেট কর সর্বনিম্ন করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা। গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআরের কার্যালয়েপ্রথম আলো

সংবাদপত্রশিল্প সম্প্রতি কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের বিস্তারের পাশাপাশি টেলিভিশনের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যেমন সংবাদপত্রশিল্পকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে, তেমনি বিভিন্ন শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, করপোরেট কর এই শিল্পের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় সংবাদপত্রশিল্পের এমন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংবাদপত্রশিল্পের ওপর আরোপিত শুল্ক-করে ছাড় চেয়েছে নোয়াব।

গতকালের প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় তিনটি সুনির্দিষ্ট বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াব। এক. নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা; দুই. আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা; তিন. সংবাদপত্রশিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট কর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নির্ধারণ করা।

নোয়াব বলছে, নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলেও এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর, পরিবহনবিমা ইত্যাদি যোগ করে মোট করভার দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবিদাওয়া তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি ও দৈনিক সমকাল–এর মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এ কে আজাদ। আরও বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টার–এর প্রকাশক ও সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম; বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ। আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে এ সভা হয়।

নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, বিশেষত ডলারের ক্রমবর্ধমান বিনিময় হার এ শিল্পকে নতজানু করে ফেলেছে। কয়েক বছর আগে এক টন নিউজপ্রিন্টের মূল্য ছিল ৬০০ ডলারের নিচে। এখন তা ৭০০ ডলারের ওপরে। এর প্রধান কারণ, ডলারের ক্রমে বেড়ে যাওয়া বিনিময় হার।

এ কে আজাদ আরও বলেন, সংবাদপত্র সেবাশিল্প হিসেবে সরকার কর্তৃক ঘোষিত। সাংবাদিক ছাড়াও মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ, বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত অনেক মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সংবাদপত্রশিল্পের অব্যাহত অগ্রগতি ও পরিচালনার জন্য শুল্ক ও করনীতি প্রয়োগে বিপুল সংস্কার প্রয়োজন, দরকার সহায়ক ভূমিকার। তিনি আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর সরকার সংবাদপত্রশিল্প বিকাশে আমাদের কোনো প্রস্তাব বা প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নেয়নি।’

নোয়াবের সদস্য এবং দ্য ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, সংবাদপত্র থেকে সরকার খুব বেশি কর পায়, তা নয়। অথচ করপোরেট–জগতে যেসব প্রতিষ্ঠান খুব মুনাফা করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একই করপোরেট কর স্তরে সংবাদশিল্পকে রাখা হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় সংবাদপত্রকে ভিন্নভাবে দেখা হয়। সংবাদপত্রের করপোরেট করে ছাড় দেওয়ার দাবি জানান তিনি। মাহ্‌ফুজ আনাম আরও বলেন, বিজ্ঞাপন ব্যয়ের ৮০ শতাংশই ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব প্রতিষ্ঠান রাজস্ব ভাগাভাগি করছে।

বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ জানান, ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলকে করের আওতায় আনা হয়েছে। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংবাদপত্রের ‘কনটেন্ট’ ব্যবহার করে। এ দেশে তাদের নিজস্ব অফিস থাকলে তাদের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি করা যেত। এই ডিজিটাল মাধ্যমকে নিয়মনীতির আওতায় আনা যায় কি না, তা বিবেচনা করা উচিত।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘গত কয়েক বছর আপনাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা যায়নি। এবার বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করব। এ খাত থেকে কী পরিমাণ কর আসে, তা দেখব। এই শিল্পকে করছাড় দিলে যে কর হারাব, তা কীভাবে আসবে, তা বিশ্লেষণ করব।’

নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রসঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, শুল্ক-কর কমানো হলে আরেক দল সুযোগের অপব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে থাকে। সব ধরনের কাগজ নিউজপ্রিন্টের আড়ালে চলে আসার চেষ্টা থাকে।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের সদস্য জাকিয়া সুলতানা, মাসুদ সাদিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।