সাক্ষাৎকার 

বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এলেও দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জমি নেই

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৮টি সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ চলছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রথমবার চারটি শিল্পকারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে। একইভাবে মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রথম কোনো কারখানা উৎপাদন শুরু করছে। সব মিলিয়ে আগামী বুধবার পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৪ কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। 

শেখ ইউসুফ হারুন

প্রশ্ন :

সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৯টি কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন করে উৎপাদনের অপেক্ষায় আছে ১৪টি। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর শিল্পকারখানা দেশের অর্থনীতিতে কেমন অবদান রাখতে সক্ষম হবে? 

শেখ ইউসুফ হারুন: একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। বেপজার (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ) আটটি ইপিজেডে ২ হাজার ২০০ একর জায়গা থেকে যে পরিমাণ রপ্তানি হয়, তা আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ। তাহলে মিরসরাইয়ে ৩৩ হাজার একর জায়গার ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সম্ভাবনা কত হবে, তা ধারণা করা যায়। আমি মনে করি, হাইটেক পার্ক, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বেপজা—এগুলোকে ঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে উন্নত বাংলাদেশ করা সম্ভব। 

প্রশ্ন :

১৫ মাস আগে আপনি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এ সময় আপনি কত দূর অগ্রসর হতে পেরেছেন? 

শেখ ইউসুফ হারুন: অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনেকগুলো প্রকল্প ও প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আটকে ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেগুলো অনুমোদন করানোর জন্য কাজ করেছি। আমাদের জনবল–সংকট আছে। সেই জায়গা পূরণে কাজ করেছি। বর্তমানে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। তার বাইরে নবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও বগুড়া—তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পাঠিয়েছি। একনেকে পাস হলে আমরা উন্নয়নকাজ শুরু করব। 

প্রশ্ন :

শিল্পকারখানার উৎপাদনের জন্য গ্যাস, পানিসহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রগতি কত দূর? 

শেখ ইউসুফ হারুন: ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে গ্যাসের জন্য উপকেন্দ্র বসানোর কাজও শেষ হয়েছে। এখন শিল্পকারখানাগুলো আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা গ্যাসের ব্যবস্থা করতে পারব। এই শিল্পনগরের শিল্পকারখানার জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফেনীর মাতামুহুরী নদীর সেচ প্রকল্পের অতিরিক্ত পানি মিরসরাইয়ে আনা হবে। এতে প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। পরে তা ১০ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ওঠানোর জন্য ২৫টি নলকূপ বসানো হয়েছে। তাতে দৈনিক ১ কোটি ২৫ লাখ লিটার পানি আসছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্পের অধীনে মেঘনা নদী থেকে পরিশোধন করা পানি আনার কাজ চলছে। এতে দৈনিক আরও পাঁচ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। 

প্রশ্ন :

বেজার এক দরজায় সেবা বা ওএসএস নিয়ে ব্যবসায়ীদের অনেক অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

শেখ ইউসুফ হারুন: ওএসএস আইনেই উল্লেখ আছে, বিভিন্ন সংস্থার সেবা দেওয়ার জন্য তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বেজায় থাকবেন। আমরা সংস্থাগুলোকে কর্মকর্তা পাঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। তবে তারা এখনো কাউকে পাঠায়নি। সংস্থাগুলো বলেছে, আপনারা তো মাত্র শুরু করলেন, শিল্পকারখানার সংখ্যা যখন আরও বাড়বে, তখন কর্মকর্তা পাঠাব। এ ছাড়া আরও চ্যালেঞ্জ আছে। বর্তমানে ১২০টি সেবার মধ্যে ৪৮টি সেবা অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো আমাদের আওতার মধ্যে আছে। তবে অন্য বিভাগগুলোর জটিলতা তো আমরা এখানে বসে সমাধান করতে পারব না। তারপরও বেজা সমন্বয়কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

প্রশ্ন :

সব সময়ই বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত দেশি বিনিয়োগের সংখ্যাই বেশি। কারণ কী? 

শেখ ইউসুফ হারুন: বিষয়টা ঠিক এমন নয়। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ধরলে সেই পরিমাণ হয়তো একটু কম। তবে অধিকাংশ শিল্পকারখানাই দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে আমরা প্রচুর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব পাচ্ছি। যদিও এ মুহূর্তে আমাদের কাছে তাদের দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জমি নেই। ভূমি উন্নয়ন করে বরাদ্দ দিতে আরও সময় লাগবে।