রপ্তানিতে ১১ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা, অগ্রাধিকার ১৪ খাতের

রপ্তানিফাইল ছবি: রয়টার্স

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তিন বছর মেয়াদি রপ্তানি নীতিমালার খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। নতুন নীতিমালায় ২০২৬–২৭ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতগুলোর জন্য স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থা করাসহ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসে আর্থিক সুবিধা বা ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে সুবিধাগুলো অবশ্যই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে আজ বুধবার ঢাকায় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের নীতিমালাটি অনুমোদনের তথ্য জানান।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের জন্য দেশে তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যমান রপ্তানি নীতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন নীতিমালা কার্যকরের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এই নীতিমালার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ৩০ জুন।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান, রপ্তানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও বৃত্তাকার অর্থনৈতিক কৌশল ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে রপ্তানি নীতিমালা ২০২৪-২৭–এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে।

মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এ নীতিমালায়।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে দেশের ৬ হাজার ৩০৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। এর মধ্যে পণ্য খাতের আয়ই হলো ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার।

অনুমোদিত রপ্তানি নীতিমালার খসড়ায় ১৪টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক খাত ও ১৯টি বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতের উল্লেখ করা হয়েছে। রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা থাকলেও নানা কারণে কাজে লাগানো যায়নি, তবে সহযোগিতা দিলে কাজে লাগানো সম্ভব—এমন সব খাতই হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের খাত। আর বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত বলতে সেগুলোকে বোঝাবে, যেগুলোর রপ্তানি সম্ভাবনা ভালো, কিন্তু উৎপাদন, সরবরাহ ও রপ্তানি ভিত্তি সুসংহত নয়। নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের খাত ও বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতে ১২ ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্যের ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে, তারা রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে শুল্ক-কর পরিশোধ করে উৎপাদিত বাকি ২০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা যাবে।

বরাবরের মতো নতুন রপ্তানি নীতিতেও পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, পাটবীজ ও শনবীজ; আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ; তেজস্ক্রিয় পদার্থ; পুরাতাত্ত্বিক দুর্লভ বস্তু; মনুষ্য কঙ্কাল; হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত ছাড়া চিংড়ি, বেত, কাঠ, কাঠের গুঁড়ি, ব্যাঙ ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আর শর্ত সাপেক্ষে ভোজ্যতেল, মোটা দানার মুগডাল; কাফকো ছাড়া অন্যান্য কারখানায় তৈরি ইউরিয়া সার; বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, গান, নাটক, সিনেমা, অডিও-ভিডিও; প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উদ্ভূত পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য; রাসায়নিক অস্ত্র; চিনি; ইলিশ মাছ; সুগন্ধি চাল; গবেষণার উদ্দেশে রক্তের প্লাজমা; বালু, কাঁচা চামড়া ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে।

এদিকে বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক বিভাগের হয়রানি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ যেসব অসুবিধা রয়েছে, সে বিবেচনায় বলা যায়, ২০২৪-২৭ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব।

গ্যাস-বিদ্যুতে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে আর লক্ষ্যমাত্রা তো বড়ই করতে হয়—এ নিয়ে জানতে চাইলে চাইলে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকার তো গ্যাসই দিতে পারছে না, সুবিধা দেবে কী! আর অর্জন করার বাস্তবতা ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা বড় করে কী লাভ?