যে যুক্তিতে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাবের একীভূতকরণের বিরোধিতা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভুতকরণের সিদ্ধান্ত বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিস সহ কয়েকটি সংগঠনফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) একীভূত করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজশাহীর ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যরা তার বিরোধিতা করছেন। ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাকাবের পরিচালনা পর্ষদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, একটি আঞ্চলিক ব্যাংক হিসেবে রাকাব রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে কৃষি উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে, কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার আওতায় রাকাবকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে রাজশাহীতে। ২৩ এপ্রিল রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট, রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এবং ১৬ এপ্রিল রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যবসায়ী নেতারা রাকাবের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

ব্যাংক একীভূতকরণের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মতো একটি বড় লোকসানি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাবকে একীভূত করা হলে একীভূতকরণের সুফল অর্জন সম্ভব হবে না। যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে, সেসব ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ লোপাটের অনেক ঘটনা থাকলেও রাকাবে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।

একটি মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোকসানে নিমজ্জিত একটি ব্যাংক। অন্যদিকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। একটি শক্তিশালী ব্যাংককে অসুস্থ একটি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলকে অবহেলা করা হচ্ছে। এটা বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতে দেবেন না।’

মানববন্ধনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ রাকাবকে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে উত্তরাঞ্চলে হরতালের ডাক দেওয়া হবে। এরপরও যদি রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের দাবি না মানা হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চল থেকে দেশের অন্য এলাকায় খাদ্যশস্য পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

রাকাবের কর্মকর্তা বলছেন, ব্যাংকটি গত তিন অর্থবছরে পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি রাকাবের লোকসানি শাখার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। আর্থিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সূচকে বিকেবির তুলনায় রাকাব ভালো অবস্থায় আছে।

একটি আঞ্চলিক ব্যাংক হিসেবে রাকাবের ভূমিকার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ভারতে ৪৩টি আঞ্চলিক ব্যাংক রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক ব্যাংক নিজ নিজ অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাকাবে বর্তমানে আমানতের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। দেখা গেছে, সংগৃহীত আমানতের শতভাগ রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে বিনিয়োগ হয়েছে। রাকাব পৃথক একটি আঞ্চলিক ব্যাংক হিসেবে কাজ না করলে এটা সম্ভব হতো না।

১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ বিকেবির সব দায় ও সম্পদ নিয়ে তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর জন্য রাকাব প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় ৩৮৩টি শাখার মাধ্যমে রাকাব কৃষি খাতে ঋণ দিচ্ছে। রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কৃষিভিত্তিক ঋণ কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়বে। রাকাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকটির ৩৮৩টি শাখার মধ্যে ৮৭ শতাংশই গ্রামে অবস্থিত।

রাকাব সূত্রগুলো বলছে, রাকাব-বিকেবি একীভূত হলে রাজশাহীতে অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের জন্য অনুমোদিত ৫০৮টি পদ বিলুপ্ত হবে।