অনলাইনে কেনাকাটা করা এখন শহুরে নাগরিকদের জন্য দারুণ এক উপায় এবং পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধের বিষয়। কারণ, ঘরে বসেই ‘অর্ডার’ করলে, মানে ক্রয়াদেশ দিলেই পণ্য নিয়ে দরজায় এসে কড়া নাড়েন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী বা ডেলিভারি ম্যান। এভাবে পণ্য কিনলে বাজারে যাওয়ার ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় না। কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর অনলাইনে কেনাকাটায় যেন জোয়ার এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে একটি জরিপ করেছে। জরিপে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দেশের মানুষ কী ধরনের পণ্য কেনেন, সেটিও তুলে আনা হয়েছে।
বিবিএসের জরিপ বলছে, অনলাইনে মানুষ খাবার কেনেন সবচেয়ে বেশি। অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশই খাবারের পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, লবণ, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, মাছ, মাংস, কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন মুদিপণ্য বেশি কেনেন।
রাজধানীর বহু নামী ফাস্ট ফুড ও রেস্তোরাঁয় খাবার অর্ডার করলে তারাই বাসায় পৌঁছে দেয়। এ জন্য ফুড ডেলিভারি বা খাবার সরবরাহকারী কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার চালডাল ও দারাজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের মুদিপণ্য বেচাকেনা করে থাকে।
অনলাইনে কেনাকাটায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কাপড়চোপড়, জুতা ও ক্রীড়াসামগ্রী। অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষের ৪৯ শতাংশের বেশি এসব পণ্য অর্ডার করেন।
পোশাকের বড় ব্র্যান্ড ও শোরুমগুলো নিজেদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্যের ক্রয়াদেশ নেয়। এরপর তারা পাঁচ-আট দিনের মধ্যে ক্রেতাকে পণ্য পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক পোশাকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। ফেসবুক পেজ খুলেও ব্যবসা করেন অনেকে।
অনলাইন কেনাকাটায় তৃতীয় স্থানে আছে রূপচর্চার সামগ্রী। অনলাইনে কেনাকাটা করেন, এমন ক্রেতাদের ৪৫ শতাংশ ক্রেতা ক্রিম, পারফিউম, শ্যাম্পু, সাবানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনসামগ্রী কেনেন। জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালগুলোর পাশাপাশি ব্র্যান্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকে এসব পণ্য কেনা যায়। হোম ডেলিভারি মানে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
আপনি যদি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে অনলাইনেই বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিট ক্রয়; হোটেল বুকিং ও গাড়িভাড়া—সবই করতে পারবেন। অনলাইনে কেনাকাটায় চতুর্থ স্থানে আছে ভ্রমণ-সংক্রান্ত যাবতীয় কেনাকাটা, যা করেন অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষের ৩৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কয়েকটি পোর্টাল হচ্ছে বুকিংডটকম, অ্যাগোডা, গোজায়ান, শেয়ারট্রিপ ইত্যাদি। রেলের টিকিটের তো এখন বড় অংশই অনলাইনে বিক্রি হয়। বিমান ও বাস পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোও ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও টিকিট বিক্রি করে। বড় হোটেলগুলো অনলাইনে বুকিং নেয়।
জরিপে ১৬টি খাতের তথ্য তুলে আনা হয়েছে বিবিএসের জরিপে। বাকি খাতগুলো হচ্ছে খেলা, সিনেমাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের টিকিট; নাটক-সিনেমা, সংগীতের যন্ত্রপাতি, ছবির সামগ্রী, ওষুধ, আসবাব, খেলনা, তথ্যপ্রযুক্তিসেবা, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, ভিডিও গেমস, কম্পিউটার সফটওয়্যার, শেয়ার বা বিমার মতো আর্থিক পণ্য।
বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনই মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। অনলাইন কেনাকাটার সুযোগে মানুষের জীবন সহজ হচ্ছে। কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকে শহরের মধ্যবিত্তরা।
বিবিএসের হিসাবে, প্রায় ৯৫ শতাংশ কেনাকাটা ক্যাশ অন ডেলিভারি ভিত্তিতে হয়। এর মানে, পণ্য হাতে পৌঁছার পর মূল্য পরিশোধ করা হয়।
প্রতিদিন ছয়-সাত লাখ ডেলিভারি
ই-ক্যাব সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ছয়-সাত লাখ ডেলিভারি হচ্ছে। প্রতিটি ডেলিভারি, তথা ক্রয়াদেশের গড় দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বাজার রয়েছে ফেসবুক উদ্যোক্তাদের দখলে।
এ বছর কেনাকাটা ৪০ হাজার কোটি টাকা
ই-ক্যাব সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে দেশে ই-কমার্সের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, গত বছর এই খাতে প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশ হয়।
বর্তমানে দেশে ই-কমার্স খাতে প্রায় পাঁচ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি কর্মরত আছেন সাড়ে তিন লাখ লোক।