ব্রিটেনে ব্যাংক নোটের চাহিদা ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম
২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ব্রিটেনে কাগুজে মুদ্রার চাহিদা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যাংক নোট মুদ্রণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ডে লা রু বলছে, মানুষের অভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে তাঁরা এখন নানা রকম কার্ড ব্যবহার করছেন কিংবা স্পর্শবিহীন লেনদেনের পথ বেছে নিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ডে লা রু ২০০ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ কোম্পানি। পৃথিবীতে যত ব্যাংক নোট ছাপা হয়, তার এক-তৃতীয়াংশের কাজ তারা করে। রাজা তৃতীয় চার্লসের ছবিসংবলিত যে নতুন নোট এখন ছাপা হচ্ছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের জন্য সেই নোটও ছাপছে এ প্রতিষ্ঠান। এখন তারা বলছে, চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে তাদের মুনাফা কমে যেতে পারে।
বুধবার লন্ডনের শেয়ারবাজারে পাঠানো এক বার্তায় ডে লা রু বলেছে, ব্যাংক নোটের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে ‘বড় ধরনের অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয়েছে এবং এর মানে হলো, পুরো বছরে তাদের যতটা মুনাফা হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা হয়তো শেষ পর্যন্ত হবে না।
যুক্তরাজ্যে কার্ডের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আবার বিপুলসংখ্যক মানুষ স্পর্শবিহীন লেনদেন বা কন্টাক্টলেস পেমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করেন। একই সঙ্গে বেড়েছে অনলাইনে বেচাকেনা। লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ডেবিট কার্ডের ব্যবহার নগদ অর্থকে ছাড়িয়ে যায়।
দেশটিতে নগদ অর্থের ব্যবহার মারাত্মকভাবে কমেছে। বর্তমানে মাত্র ১৫ শতাংশ লেনদেন হয় নগদ অর্থে, অর্থাৎ ক্যাশে, এক দশক আগে যা ছিল ৬০ শতাংশ।
ব্যাংক নোটের চাহিদা কমে যাওয়ার ব্যাপারে ডে লা রুর এ ঘোষণা এটাই দেখাচ্ছে যে ২০০০ সালের পর থেকে কাগুজে মুদ্রার ব্যবহার কমছে। ২০০০ সালের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগুজে মুদ্রার মজুত করেছিল। সে সময় ভয় ছিল যে তথাকথিত ‘মিলেনিয়াম বাগ’ ব্যাংক লেনদেনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
সাধারণত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় ব্যাংক, পোস্ট অফিস ও নগদ অর্থের জোগান দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো কাগুজে মুদ্রা মজুত করে। তাদের লক্ষ্য থাকে, হঠাৎ চাহিদা বাড়লে যাতে নগদ অর্থের জোগান দেওয়া যায়। কোভিড মহামারির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নগদ অর্থ মজুতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
ডে লা রু প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৮১৩ সালে একটি ছাপাখানার ব্যবসা হিসেবে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন টমাস ডে লা রু। পরে লন্ডনে এটি খড়ের টুপি এবং লেখার কাগজপত্র ও অন্যান্য জিনিসও বিক্রি শুরু করে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে করা এক চুক্তির আওতায় এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাপাখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আগামী মাসে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকের আগে তাঁর ছবিসংবলিত লাখ লাখ নতুন ব্যাংক নোট এখন ছাপা হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝির আগে এসব নোট বাজারে পাওয়া যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।
তবে এসব নোটের ব্যবহার কতটা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যুক্তরাজ্যের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মাসে মাত্র একবার নগদ অর্থ ব্যবহার করেন, অথবা একবারেই করেন না। এ খাতের পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১০ লাখ মানুষ দৈনন্দিন কেনাকাটা করতে নগদ অর্থের ব্যবহার করেন।
ব্যাংক নোট ছাপানোর চাহিদা সম্প্রতি অতি সামান্য বাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এমন ধারণা দিয়ে ডে লা রু বলেছে যে দীর্ঘ মেয়াদে চাহিদা বাড়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। কোম্পানিটি বলেছে, তাদের মুনাফা দুই কোটি পাউন্ডের মতো হতে পারে, যা শেয়ারবাজারের প্রত্যাশার চেয়ে কম। এরপর বুধবার তাদের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি পড়ে যায়।
ব্যবসা বাড়াতে না পারার কারণে ডে লা রু সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অন্যতম বড় শেয়ারহোল্ডার ক্রিস্টাল অ্যাম্বার কোম্পানির চেয়ারম্যান কেভিন লুজমোরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর দেশটির পাসপোর্ট ছাপার কাজ পেয়েছিল ডে লা রুর প্রতিদ্বন্দ্বী একটি ফরাসি-জার্মান কোম্পানি। তখন তারা সতর্ক করেছিল যে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
চারটি মহাদেশজুড়ে ডে লা রু কার্যক্রম চালায়। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক নোট, ট্যাক্স স্ট্যাম্প ও নিরাপত্তা পরিচয়পত্র ছাপানো। অস্ট্রেলিয়া, কাতার, বাহরাইন ও ওমানে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের কর্মীর সংখ্যা ২ হাজার ৩০০।