যেভাবে পাওয়া যাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ অনুমোদনের ফলে দেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি দুটোই বাড়বে।

সংগৃহীত

দেশে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন ভেনামি চিংড়ি চাষে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে। তবে আগ্রহীদের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে মিলবে এ সুযোগ।

জানা গেছে, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ‘বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ নির্দেশিকা’ অনুমোদনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. হেমায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এ–সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সুপারিশে ভেনামি চিংড়ি চাষের বিধিনিষেধসংবলিত নির্দেশিকা অনুমোদন করা হলো।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এ জন্য বায়োসিকিউরিটি, সঙ্গনিরোধসহ ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা থাকতে হবে। অনুমোদন পেতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত ছকে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য দপ্তরে।

এটা মাথায় রাখতে হবে, সঠিক পদ্ধতি মেনে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদনে না গেলে তাতে নানা উত্থান-পতন হতে পারে।
কাজী বেলায়েত হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবেদনের পর মাঠপর্যায়ের কমিটি প্রস্তাবিত ভেনামি চিংড়ির খামার সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। তারা ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সুস্পষ্ট মতামত জানাবে। তবে অনুমতি পাওয়ার পরও বেশ কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে। অন্যথায় চাষের অনুমোদন বাতিল করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত খামারের নির্বাচিত স্থানের বাইরে ভেনামি চিংড়ি চাষ না করা এবং অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো পর্যায়ে এ চিংড়ি স্থানান্তর না করা। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা ১৫ দিন বয়সের চিংড়ি পোনা ও ব্রুড চিংড়ি অনুমতিপত্রে উল্লেখিত খামার ছাড়া অন্য কোথাও সরবরাহ না করার ব্যাপারেও বিধিনিষেধ রয়েছে।

ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতিকে এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে অবশেষে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন পাওয়া গেল। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, সঠিক পদ্ধতি মেনে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদনে না গেলে তাতে নানা উত্থান-পতন হতে পারে।’

সরকারি নির্দেশনায় ভেনামি চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় জৈব নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, এ চিংড়ি চাষের জন্য বায়োসিকিউরিটির জন্য পানি ও বর্জ্যশোধন, ভৌত অবকাঠামোর বিচ্ছিন্নতা, বায়ু সঞ্চালন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, রোগের তথ্য সংরক্ষণ, খাদ্য প্রয়োগসহ অন্যান্য তথ্যও হালনাগাদ রাখতে হবে।

কোনো কারণে ভেনামি চিংড়িতে রোগ দেখা দিলে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মৎস্য হ্যাচারি আইন, মৎস্য হ্যাচারি বিধিমালা ও মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন অনুসরণ করে দ্রুত ওই সব সংক্রমিত চিংড়ি ধ্বংস করতে হবে। রোগাক্রান্ত খামার সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে আবার উৎপাদনে যেতে হবে।

মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে সনাতন পদ্ধতির বদলে আধা নিবিড় বা নিবিড় পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ এ চিংড়িকে মানসম্মত খাদ্য যথাযথভাবে দিতে হবে। কোনোভাবেই অননুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক, রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। আর বাজারজাত করার ৮ থেকে ১০ দিন আগে চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ২ লাখ ৬ হাজার ৭৬৩ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। এ জমিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৭২ হাজার ৮০৯ টন। বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি। সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এখন দেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি বেশ বাড়বে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ডলার। তবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে চিংড়ি রপ্তানিতে আয় কমেছে ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ক্রিমসন রোজেলা সি ফুডের এমডি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভেনামি চিংড়ি রপ্তানি বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।