সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আজ রোববার ‘উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে নারীদের জন্য বিনিয়োগ’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে অ্যামচেমছবি: সংগৃহীত

দেশে বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে নারীদের কর্মদক্ষতা ও প্রযুক্তিজ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নও সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ বা অ্যামচেম আয়োজিত সেমিনারে এসব মন্তব্য করেছেন আলোচকেরা। তাঁরা বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত করা গেলে জনমিতির সুবিধা পাওয়া যাবে।

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আজ রোববার ‘উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে নারীদের জন্য বিনিয়োগ’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হেলেন লাফেভ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাফরিজা শ্যামা, এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা অংশীদার সোনিয়া বশির কবির এবং এফসিবি বিটপীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ আলী।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন অ্যামচেমের নির্বাহী সদস্য এবং ওরাকল করপোরেশনের বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার রুবাবা দৌলা। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।

দেশের রাজনীতিতে নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন বলে জানান সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও সংসদীয় নেতা নারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। নারীদের ক্ষমতায়নের আলোচনা এলে তাঁদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সরকারের পরিবার–পরিকল্পনা কর্মসূচিতে সফলতা সত্ত্বেও এখনো মাতৃ–মৃত্যুহার অনেক বেশি। কারণ, অনেক পরিবারে নারীরা নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

বাংলাদেশের জনমিতিতে নারীর বড় হিস্যা রয়েছে জানিয়ে এই সুবিধাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেভ। তিনি বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে নারীরা বড় অবদান রাখছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন সরাসরি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটায়। বর্তমানে দেশের করপোরেট ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশে কৃষি, উৎপাদন ও সেবা শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে স্বীকৃত এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও করোনা মহামারি, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ, মূল্যস্ফীতি ও আরও কিছু বৈশ্বিক সমস্যা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতায় বাধা সৃষ্টি করছে।

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আজ রোববার ‘উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে নারীদের জন্য বিনিয়োগ’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে অ্যামচেম
ছবি: সংগৃহীত

গৃহকাজে নারীরা যে অবদান রাখছেন, তার স্বীকৃতি দেওয়া আবশ্যক বলে জানান সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাফরিজা শ্যামা। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রমাণের জন্য নারীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক বিষয়গুলোতেও তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন।  

নারীর দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়ানোর কথা বলেছেন এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবিরও। তিনি বলেন, প্রযুক্তিজ্ঞান নারীদের উঁচু অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। দক্ষতা বাড়ানো গেলে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর পরিবর্তে সিলিকন ভ্যালিতে কম্পিউটারবিজ্ঞানী পাঠানো সম্ভব হবে।  

এফসিবি বিটপীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ আলী বলেন, বৈষম্য কমাতে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতে যেসব নারী রোল মডেল হয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে।