আজ আবারও রুপির রেকর্ড দরপতন
রুপির দামের পতন অব্যাহত। বুধবার এই প্রথম ডলারের দর ৮৩ রুপিতে উঠল, অর্থাৎ এক দিনেই ডলারের দর বেড়েছে ৬০ পয়সা। তবে দিন শেষে রুপির দর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদন লেখার সময় এক ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ২৫ ডলার।
গতকালও রুপির রেকর্ড দরপতন হয়। আজ আবার তা নতুন রেকর্ড গড়ল। প্রতিদিন রুপির এ দরপতন রেকর্ড শব্দটিকেই ক্লিশে বানিয়ে দিচ্ছে। তবে বিশ্ব অর্থনীতির এ অনিশ্চয়তার যুগে ভারতসহ বিশ্বের অনেক মুদ্রারই দরপতন হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, এক মাসের কম সময়ে ৭৯ রুপির ঘর থেকে ৮৩ রুপিতে উঠেছে ডলার। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন, রুপির পতন হয়নি, বরং ডলার শক্তি বাড়াচ্ছে। তাঁর এ মন্তব্য নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়, কটাক্ষ করেন বিরোধীরাও। রুপি বাঁচাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, এদিন সেই প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, রুপি সবল হোক বা দুর্বল, দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে অনেক কিছু করতে হবে। কারণ, নরেন্দ্র মোদির জমানায় অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে।
এদিন বিশেষজ্ঞদের দাবি, রুপির এমন পতন ভারতের অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমার সুবিধা নেওয়া যাবে না। অন্যান্য পণ্য এবং পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানির খরচও বাড়বে। সব মিলিয়ে চড়া আমদানি খরচ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
এদিকে গতকাল বুধবার ভারতের শেয়ার সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি বহাল আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একে তো বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ডলারের চাহিদা এখন বিশ্বজুড়ে, তার ওপর ফেডারেল রিজার্ভ যে নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা ইন্ধন জোগাচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক, তারা আবার সেটা ডলারে বদলে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমেরিকার মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বিশ্লেষকেরা বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা এখন সারা বিশ্বকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আর এ মন্দার আশঙ্কায় মার্কিন ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। আবার একই সময়ে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত করছে।
মার্কিন ডলার যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, সেটা পৃথিবীর নানা প্রান্তে, নানা পেশার, এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত টের পাচ্ছে। মার্কিন ডলারের শক্তি এমন যে তার যেকোনো নড়াচড়া নানা প্রান্তের সব স্তরের মানুষকেই স্পর্শ করে। বর্তমান বাস্তবতায় তা আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। ইউরোপ, এশিয়াসহ নানা অঞ্চলের মুদ্রাকে কেবল অস্থিরতায় ফেলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, নিম্নমুখী করে ফেলেছে এ ডলারের উত্তাপ।
মার্কিন ডলার হঠাৎ করে এমন তপ্ত হয়ে উঠল কেন, এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে। বিষয়টি হলো বিশ্বের বাজারব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে, অনিশ্চয়তা ডানা মেলে, বিনিয়োগকারীরা তখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা আর অস্থিরতায় সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা এখন মূলত মার্কিন ডলারেই নিরাপত্তা খুঁজছেন আর তাতেই ডলারের হাসি চওড়া হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ভয়ংকর আকার নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীর্ষ ব্যাংক তাতে লাগাম পরাতে আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়াচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তাই ডলারে বিনিয়োগ ও সে জন্য তার দর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। এতে আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক জিনিসের দাম আরও বাড়বে ভারতে। সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। বাজারে চাহিদাও কমতে পারে, যা বিরূপ প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে।