যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বস্তি, ইইউতেও ভালো প্রবৃদ্ধি

তৈরি পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দেশটির ভোক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন পণ্য কেনাকাটা কমিয়ে দেন। তার প্রভাবে বিদায়ী ২০২২–২৩ অর্থবছরে এই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যায়। তবে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত দুই মাসে এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৭৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের প্রথম দুই মাসে ১৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। এ দেশের রপ্তানি হওয়া মোট পোশাকের ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর বাজারটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৮৫২ কোটি ডলারের। এই রপ্তানি তার আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৯০১ কোটি ডলারের পোশাক।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর এই বাজারে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ইইউতে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এই বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৯৭ কোটি ডলারের পোশাক। গত বছরের জুলাই-আগস্টে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছিল ৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। আরেক প্রচলিত বাজার কানাডায় গত দুই মাসে রপ্তানি হয়েছে ২৪ কোটি ডলারের পোশাক। দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অপ্রচলিত বাজারেও তৈরি পোশাকের রপ্তানি ২২ শতাংশ বেড়েছে। সম্মিলিতভাবে রপ্তানি হয়েছে ১৪৭ কোটি ডলারের পোশাক। তার মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে জাপানে, ২৯ কোটি ডলার। দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ডলারের পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ডলারের পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আসার পরিমাণ বেড়েছে। তাতে গত বছরের তুলনায় ৫-১০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বাড়তে পারে। যদিও ক্রেতারা আগের চেয়ে কম দাম অফার করছে। এতে কারখানামালিকদের কেউ কেউ ক্রয়াদেশ নিতে পারছেন না। তা ছাড়া অনেক বিদেশি ক্রেতা এখনো রপ্তানি হওয়া পোশাকের অর্থ ছয় মাসেও পরিশোধ করছেন না। সে কারণে অনেক কারখানা কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছেন।