ঢাকার বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে

অবরোধের কারণে পাইকারেরা সবজি পাঠাতে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। এতে উৎপাদনস্থলে সবজির দাম কমে গেছে।

বাজারে ক্রেতার সংকট। তাই সবজির দামও পড়তি। সবজি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় চাষিরা। গতকাল বগুড়ার মহাস্থান হাটে
ছবি: সোয়েল রানা

শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাতে ঢাকার বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে ব্যবধানে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ কয়েকটি সবজির দাম ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

আবার অবরোধের কারণে পাইকারেরা সবজি পাঠাতে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। এতে উৎপাদনস্থলে সবজির দাম কমে গেছে। ফলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজধানীর মগবাজার, সেগুনবাগিচা, পলাশী ও হাতিরপুল বাজারের আটজন সবজি ব্যবসায়ী ও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, শীতের নতুন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাতে দাম কমে আসছে। আবহাওয়াজনিত বড় কোনো সমস্যা না হলে সবজির দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।  

রাজধানীর মগবাজার, সেগুনবাগিচা, পলাশী ও হাতিরপুল বাজারের ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে বেগুনের কেজি ছিল ১০০ টাকা। এখন বেগুনের কেজি ৭০-৯০ টাকা। এ ছাড়া শিমের দাম ১২০ থেকে কমে ১০০ টাকা, ৬০ থেকে ৭০ টাকার প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, ৮০-৯০ টাকার করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে ও কচুমুখি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি মুলা ৫০ টাকা ও পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মরিচের কেজি ২০০-২৫০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা।  

বাজারে টমেটো, গাজর ও বরবটির মতো বেশ কিছু সবজির দাম এখনো বেশি।  এসব সবজির কেজি ১০০ টাকার আশপাশে। দেশে ৪-৫ দিন আগে আমদানি করা আলু প্রবেশ করেছে। এতে দেশি আলু দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। তাতে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

পলাশী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, আগে যখন দাম বেড়েছিল, তখন সবজি মানুষ কিনেছেন কম। এখন অবরোধের কারণে আবার বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। তাই সবজি বিক্রিতে সুবিধা করা যাচ্ছে না।  

সবজির দামে স্বস্তি এলেও পেঁয়াজের বাজার এখনো অস্থির। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসার আগপর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনাও কম। খুচরায় দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৩০-১৫০ টাকা। আর মানভেদে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এখন ১০০-১২০ টাকা।
ঢাকার বাইরের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত উৎপাদনস্থলে সবজির দাম কমতে থাকায় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।

অবরোধের কারণে পাইকারেরা বাজারে সবজি পাঠাতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় কৃষকেরা দামও কম পাচ্ছেন। যদিও ঢাকার বাজারে সবজি সরবরাহের কোনো ঘাটতি হয়নি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে প্রতি মণ করলা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সেই করলা আজ (গতকাল) ৬০০ টাকায়ও কেউ কিনছেন না। বাইরের পাইকারেরা আসতে না পারায় সবজির দাম পড়ে গেছে।

আগাম ফসল তোলায় এখনো কিছু কিছু সবজির ক্ষেত্রে কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। রংপুর মিঠাপুকুরের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে কিছু শিম ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। গত বছর এক একর জমিতে দুই লাখ টাকার শিম বিক্রি করি। এবার তিন লাখের মতো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে জেলার পাইকারেরা বাইরে সবজি পাঠাতে পারছেন না। এ জন্য সবজির দাম পড়ে গেছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে দিয়েছেন রংপুরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও]