খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে

খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করা মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেশের এই মানুষেরা ল্যাট্রিন না পেয়ে খোলা আকাশের নিচেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। বাংলাদেশে এখন দশমিক ৯৪ শতাংশ পরিবারের সদস্য উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন। ২০২২ সালে এই হার ছিল দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে কত মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করেন বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন, সে হিসাব দেখা যাক। সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় জরিপ অনুসারে, দেশে খানার সংখ্যা ৩ কোটি ৮২ লাখ ৯৪ হাজার ১৩১। সেই হিসাবে, ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৪টি পরিবারের সদস্য উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন। জরিপ অনুসারে, প্রতিটি পরিবারের গড় সদস্যের সংখ্যা ৪ দশমিক ২৬।

বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস এবং খানার আয় ও ব্যয় জরিপ প্রতিবেদনের হিসাব বিবেচনা করে দেখা যায়, দেশে খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৩ হাজারের কিছু বেশি। তাঁরা মাঠঘাটে, বনবাদাড়ে, নদী ও নালায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। এক বছরের ব্যবধানে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ বেড়েছে।

স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন ২০২৩–এর প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা এক শতাংশের নিচে আছে, তাই পরিস্থিতিকে অপরিবর্তিত ধরা যেতে পারে।

দুটি হিসাব বিবেচনায় নিলে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এমন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে কেন, এই প্রশ্নে আলমগীর হোসেন বলেন, সেই ব্যাখ্যা বিবিএস দিতে পারে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জবাব দিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।

বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ পরিবার মৌলিক স্যানিটেশনের সুবিধা পায়। তারা মৌলিক সুবিধা আছে এমন টয়লেট ব্যবহার করে। ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ পরিবার সীমিত মৌলিক সুবিধার টয়লেট ব্যবহার করে। আর ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ পরিবার অনুন্নত সুবিধার টয়লেট ব্যবহার করে। অন্যরা খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগের মতো কাজটি করে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুসারে, স্যানিটেশনের সুবিধাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো, নিরাপদ টয়লেটের সুবিধা (সেইফলি ম্যানেজড), মৌলিক সুবিধাসম্পন্ন টয়লেট, সীমিত সুবিধাসম্পন্ন টয়লেট, অনুন্নত টয়লেট ও উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ।

সব ধরনের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা আছে এবং অন্য কোনো পরিবার তা ব্যবহার করে না; বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশন হয়, এমন টয়লেটকে নিরাপদ টয়লেটের সুবিধা (সেইফলি ম্যানেজড) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সব ধরনের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা আছে এবং অন্য কোনো পরিবার তা ব্যবহার করে না, একে মৌলিক টয়লেটের সুবিধা বলা হয়। সব ধরনের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা আছে এবং দুইয়ের অধিক পরিবার তা ব্যবহার করে, একে সীমিত সুবিধার টয়লেট বলা হয়। উন্মুক্ত পিট ল্যাট্রিন সুবিধা অনুন্নত টয়লেট হিসেবে চিহ্নিত। আর মাঠঘাটে, বনবাদাড়ে, নদী, নালাসহ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে পৃথিবীর বহু মানুষ।

এসডিজির ৬ নম্বর লক্ষ্য অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছরে পৃথিবীর সব দেশ ও অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করার প্রবণতা কমছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রামের (জেএমপি) হিসাব অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) ১৩ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় আছে। যদিও বাংলাদেশে এই হার অনেক কম। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

সাব–সাহারা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন। আর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে এই হার শূন্য। অন্যদিকে ল্যাটিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এই হার ১ শতাংশ।