আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী নিচ্ছে এনবিআর, আবেদনে খরচ ১১১২ টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনফাইল ছবি

মাঠপর্যায়ে কর আদায়ের কাজে বেসরকারি ব্যক্তি নিয়োগের কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী হওয়ার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে সংস্থাটি। আজ রোববার থেকে অনলাইনে এই আবেদন গ্রহণ করা হবে। চলবে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ দেওয়া হবে। এনবিআরের কর (বিসিএস) একাডেমি পরিচালনা করছে পুরো প্রক্রিয়াটি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীর আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সরকারি মালিকানার মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন। টেলিটকের ওই ঠিকানা হলো— http://bcsta.teletalk.com.bd।

প্রত্যেক আবেদনকারীকে আবেদন বাবদ এক হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া টেলিটকের সার্ভিস চার্জ বাবদ আরও ১১২ টাকা দিতে হবে। আবেদন করতে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ১ হাজার ১১২ টাকা।

তবে যাঁরা সনদ পাবেন, তাঁরা এ বছর আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারবেন না। কারণ, আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ দেওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা যাবে না।

মাঠপর্যায় থেকে কর আদায় বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে বেসরকারি ব্যক্তি নিয়োগের কাজ করছে এনবিআর, তবে এসব ব্যক্তির কর আদায় করার ক্ষমতা থাকবে না। তাঁরা শুধু করদাতাদের রিটার্ন প্রস্তুত ও জমায় সহায়তা করবেন। এসব ব্যক্তি ওই করদাতার আইনি প্রতিনিধিও হতে পারবেন না। এ ধরনের সহায়তা নেওয়ার জন্য করদাতাকে কোনো টাকা দিতে হবে না। ইতিমধ্যে এনবিআর আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী বিধিমালা প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের কর (বিসিএস) একাডেমির পরিচালক হাফিজ আল আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে চাই। ২৫ জানুয়ারির পর কত আবেদন পড়ল, তা জানা যাবে। এর ওপর নির্ভর করছে কত দ্রুত আমরা পরীক্ষা নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব। এ ধরনের আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীরা করদাতাদের জন্য বেশ সহায়ক হবে।’

যোগ্যতা ও নিয়োগের প্রক্রিয়া

একজন আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তবে সরকারি চাকরি করলে রিটার্ন প্রস্তুতকারী সনদ পাবেন না। প্রার্থীকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। ওই ব্যক্তিকে অবশ্য কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) হতে হবে এবং রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র থাকতে হবে। কম্পিউটার চালনা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

তবে এনবিআরে পরীক্ষা দিয়ে রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ নিতে হবে। কিছু পেশাজীবী পরীক্ষা ছাড়াই রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ নিতে পারবেন। এ তালিকায় আছেন—সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, সাচিবিক বিদ্যায় দক্ষতা অর্জনকারী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী ও কর আইনজীবী।

রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের সহায়তা করতে এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এসব রিটার্ন প্রস্তুতকারী ওই সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন থাকবেন।

কার কী লাভ

রিটার্ন প্রস্তুতকারীকে অর্থ দেবে এনবিআর। যে করদাতা যত টাকা কর দেবেন, এর একটি অংশ পাবেন ওই রিটার্ন প্রস্তুতকারী। এনবিআরের খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর ন্যূনতম করের ওপর ১০ শতাংশ; পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। অন্যদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ন্যূনতম করের ওপর ৫ শতাংশ; পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ১ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার দশমিক ৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ২৫ শতাংশ পাবেন রিটার্ন প্রস্তুতকারী।

কোনো করদাতার পাঁচ বছর এভাবে রিটার্ন জমায় সহায়তা করার পর ষষ্ঠ বছর থেকে আর প্রণোদনা পাবেন না রিটার্ন প্রস্তুতকারী। অন্যদিকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান রিটার্ন প্রস্তুতকারীর প্রাপ্য প্রণোদনার ১০ শতাংশ সেবা মাশুল হিসেবে নিতে পারবে।

রিটার্ন প্রস্তুতকারী ব্যক্তি এনবিআরে প্রণোদনার অর্থ পাওয়ার জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। এক মৌসুমে একজন রিটার্ন প্রস্তুতকারী কয়জন করদাতাকে সেবা দিয়েছেন, সেই তথ্য সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সেই অনুযায়ী এনবিআরে আবেদন করবে। এরপর কর কর্মকর্তারা আবেদনপত্র যাচাই–বাছাই করে অর্থ ছাড় করবেন।