‘গিফট কার্ড’ বিক্রি করতে পারবে না ইভ্যালি

ইভ্যালি

এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ২৮ অক্টোবর নতুন করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ হিসেবে ইভ্যালি নতুন ব্যবসায়িক কার্যক্রমের নামকরণ করে ‘ধন্যবাদ উৎসব’।

তবে নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও আগের সব ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় ইভ্যালি। ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এ পরামর্শ চেয়ে গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

পরামর্শের বদলে এক দিনের ব্যবধানেই আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালিকে নতুন চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি বেআইনিভাবে ‘গিফট কার্ড’ বিক্রি করছে। এ কার্যক্রম বন্ধ না করলে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। এ পর্ষদে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এখনো চেয়ারম্যান হিসেবেই আছেন। এ ছাড়া আছেন তাঁর মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া আছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী কামরুন নাহার ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন। ইভ্যালির চিঠিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ঢাকায় ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে গত ১১ অক্টোবর নতুন পর্ষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, হাইকোর্টের নির্দেশনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধান অনুযায়ী ইভ্যালি ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নতুন পর্ষদ আগের ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও ভোক্তাদের সব দাবি নিরসনে কাজ করবে। তবে এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ খুব প্রয়োজন।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানেরই ভালো চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারা ভালো ব্যবসা করুক। তবে পরামর্শ বলতে ইভ্যালি কী বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

হাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা অনুযায়ী গিফট ভাউচার বিক্রির নিয়ম নেই। কিন্তু ইভ্যালি তা করছে। আমরা তাদের এ কার্যক্রম বন্ধ করতে চিঠি পাঠিয়েছি।’

২০২১ সালের ৪ জুলাই জারি হওয়া ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম, যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তৈরি, ব্যবহার বা কেনাবেচা করা যাবে না।

ইভ্যালির পেজে দেখা যায়, ‘ও কোড’ নামের একটি ফ্যাশন হাউস থেকে পোশাক কেনার জন্য ৫৯ শতাংশ ছাড়ের অফার দেওয়া আছে। ইভ্যালি থেকে ২ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকার স্মার্ট গিফট কার্ড কিনে এ অফার ভোগ করা যাবে।
ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আড়ং, স্বপ্নের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে গিফট কার্ড বিক্রি করে, আমরা সেভাবেই করছিলাম।’ এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি।

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পদত্যাগ করে এক বছর আগে আদালতের গঠন করে দেওয়া পাঁচ সদস্যের ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ছিলেন ওই পর্ষদের প্রধান। পর্ষদে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী ইভ্যালির ওপর নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিদায়ী পর্ষদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ইভ্যালি ব্যবসা করেছে। স্বল্পসংখ্যক গ্রাহক পণ্য পেলেও বিপুলসংখ্যক গ্রাহক পণ্য পাননি। লেনদেনের বড় একটা অংশ হয়েছে নগদ অর্থে।

ইভ্যালির মালিকানা ছিল চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের নামে—উভয়েরই ৫০ শতাংশ। মোহাম্মদ রাসেল গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে। শামীমা নাসরিনও কারাগারে ছিলেন। তিনি জামিনে বের হয়েছেন গত ৬ এপ্রিল। এ ফাঁকে শামীমা নাসরিন তাঁর শেয়ারের একটা অংশ মা ও ভগ্নিপতিকে দিয়েছেন।