৩ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে পুরস্কার

এবারে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীসহ স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের এমডি মোশাররফ হোসেন, নারী উদ্যোক্তা সিরাজুম মুনিরা ও ব্র্যাক ব্যাংক এই পুরস্কার পেয়েছে।

ডিএইচএল-ডেইলি স্টার বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস প্রদান অনুষ্ঠানে বাঁ থেকে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, পুরস্কারজয়ী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, পুরস্কারজয়ী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পুরস্কারজয়ী নারী উদ্যোক্তা সিরাজুম মুনিরা, আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত শিল্পোদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ও ডিএইচএল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনাপরিচালক মিয়ারুল হক। গতকাল রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদানের জন্য চার ক্যাটাগরিতে তিন ব্যক্তি ও এক ব্যাংককে ২১তম বাংলাদেশ ব্যবসা পুরস্কার দিয়েছে বহুজাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। এবারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, সেরা ব্যবসায়ীর স্বীকৃতি পেয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন। একই সঙ্গে সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক এবং নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন সুতার কাব্যের চেয়ারম্যান সিরাজুম মুনিরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে ডিএইচএল ও দ্য ডেইলি স্টারএর এই পুরস্কার তুলে দেন। ২০২২ সালের জন্য পুরস্কারটি দেওয়া হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আর এফ হোসেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকে যাঁদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, আমি কোনো না কোনোভাবে তাঁদের সংস্পর্শে আসতে পেরেছি। ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের দায়িত্বশীলতা দেখেছি। এই পুরস্কার তাদের প্রাপ্য। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যে খাতের ব্যবসায়ী, আমিও সেই খাতের একজন। ওনার সুসময়-দুঃসময় দুটোই দেখেছি। সব সময় কাছে থেকেছি। তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রমী একজন মানুষ। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে যাঁকে পুরস্কার দেওয়া হলো, ওনাকে আগে না চিনলেও আজকে কথা হয়েছে। আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওনাকে ধন্যবাদ। আর আমাদের সবার শ্রদ্ধাভাজন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর হাতে আমি পুরস্কার তুলে দিতে পেরে নিজেকেই ভাগ্যবান মনে করছি।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজ যাঁদের পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হলো, তাঁরা তো সম্মানিত হলেনই, যাঁরা এই পুরস্কার দিয়েছেন, তাঁরাও সম্মানিত হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কারণ, এমন মানুষদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পারাটাও বড় ব্যাপার। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এসব মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।’ 

অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী নিজের ব্যবসায়িক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা যখন ব্যবসা শুরু করি, তখন সবকিছু এত সহজ ছিল না। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে। তবে ব্যবসার শুরু থেকেই আমাদের  একটাই স্বপ্ন ছিল—দেশের জন্য কিছু একটা করা। আর স্বপ্ন ছিল যেটাই করি, বড় কিছু করব।’

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা চলমান রাখতে হলে লালফিতার দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে।

দ্য ডেইলি স্টার–এর প্রকাশক ও সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দেশের জন্য যে অবদান, তা অনেক সময় অগোচরে থেকে যায়। সবাই সমানভাবে স্বীকৃতি পান না। এ জন্য দুই দশক আগে আমরা এমন একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেই থেকে যাঁরা সততা ও সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যবসা করছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুই ধরনের ঋণখেলাপি রয়েছে। যার মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার জন্য একটি শ্রেণি ইচ্ছা থাকলেও ব্যাংকের কাছে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। আরেক ধরনের ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হবে বলেই। এতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, একটি দেশের প্রাণশক্তি হচ্ছে সমৃদ্ধ অর্থনীতি।’

ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়ারুল হক বলেন, ‘২১ বছর ধরে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের অংশ হতে পেরে গর্বিত।’

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি তপন চৌধুরী, আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, অ্যাডকমের চেয়ারম্যান গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, হা–মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এ কে আজাদ, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ।