অগ্রণীকে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সীমার বেশি ঋণ দেওয়ায় জনতা ও রূপালী ব্যাংকের টাকা আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার একই অপরাধে অগ্রণী ব্যাংককে শুধু ‘সতর্ক’ করে ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘দ্বিমুখী নীতি’র চিত্র ফুটে উঠেছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। সীমার বেশি ঋণ প্রদান করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সাময়িকভাবে জব্দ করে রাখতে পারে।

জানা যায়, আর্থিক অবস্থা উন্নতি ঘটাতে ২০০৩ সাল থেকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সাল থেকে এমওইউয়ে আরও কিছু বিস্তারিত শর্ত যুক্ত করা হয়। ফলে বছরের শুরুতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়, ব্যাংকগুলোকে উল্লেখিত শর্ত মেনে বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এসব শর্তের অন্যতম একটি হলো, ওই বছরে কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া।

অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ব্যাংকটি। তবে বছর শেষে ঋণ বিতরণ বেড়ে হয় ২৩ শতাংশ। ফলে সীমার চেয়ে ঋণ ৮০০ কোটি টাকার বেশি হয়ে যায়। এ কারণে ব্যাংকটির কাছে বেশি ঋণ বিতরণের কারণ জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকটি জবাব দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক আর এগোতে চায়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় ব্যাংকটি জানায়, সুদসহ ঋণ বেশি হয়ে গেছে। ফলে সীমা অতিক্রম করছে কি না, তা বোঝা সম্ভব নয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ‘২০১৮ সালে সম্পাদিত স্মারকে সুদসহ ঋণের (অ্যাডজাস্টেড লোন) প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করায় আপনাদের সতর্ক করা হলো।’

>শর্ত লঙ্ঘন করায় জনতা ও রূপালী ব্যাংকের টাকা কেটে রাখা হয়। একই কারণে অগ্রণী ব্যাংককে শুধু সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হিসাব করছে, তাতে আমাদের আপত্তি আছে। সুদসহ ঋণ হিসাব করলে তা অনেক বেশি হয়ে যায়। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব বিবেচনায় নিলে ঋণ বেশি হয় না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকেরও পর্যবেক্ষক। গতকাল এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগে যেসব ব্যাংকের টাকা জব্দ করা হয়েছিল, তাদের সতর্ক করার পরও বেশি ঋণ দিয়েছিল। তবে অগ্রণী ব্যাংককে সতর্ক করার পর তারা ঋণ বিতরণ কমিয়ে এনেছে। এ জন্য ব্যাংকটিকে শুধু সতর্ক করা হয়েছে।

চলতি বছরের জুন শেষে যে ১১টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিতে ছিল, তার মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক একটি। মুন গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে কয়েক বছর আগে আলোচনায় আসে ব্যাংকটি। ওই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে চাকরিও হারাতে হয়। চট্টগ্রামে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়ে আটকা পড়েছে অগ্রণী ব্যাংক, যা আদায় করতে না পেরে অবলোপন করে ব্যাংকটি।

এদিকে ২০১৬ সালের সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) চুক্তির শর্ত না মানায় ২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের ৪১৮ কোটি টাকা জব্দ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা জনতা ব্যাংকের হিসাব থেকে এ টাকা কেটে রাখা হয়। একই কারণে রূপালী ব্যাংকেরও টাকা আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।