অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করলেই ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যানকে প্রগতিশীল বা প্রগ্রেসিভ হারে জরিমানা দিতে হবে। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৬ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে। দেশের মহাসড়ক, সড়ক ও সেতুর ওপর অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চায়। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে পরিবহন খরচ আড়াই-তিন গুণ বেড়ে যাবে বলে পরিবহনমালিকেরা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ৬ থেকে ২৬ চাকার গাড়ি দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হয়। এ জন্য ৬ চাকার গাড়ি সর্বোচ্চ ১৫ টন, ১০ চাকার গাড়ি ২৫ টন, ১৪ চাকার গাড়ি ৩৩ টন, ১৮ চাকার গাড়ি ৩৮ টন, ২২ চাকার গাড়ি ৪১ টন এবং ২৬ চাকার গাড়িকে ৪৪ টন পর্যন্ত মালামাল পরিবহন করার পরিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই পরিসীমা অতিক্রম হলেই গাড়িগুলোকে জরিমানা গুনতে হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও মহাসড়কের পাশে পণ্যসহ গাড়ি পরিমাপের জন্য ৮টি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করেছে। আরও ১০টি স্টেশন স্থাপন প্রক্রিয়াধীন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
গত রোববার মুঠোফোনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশে সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের কারণে এসব সড়ক-সেতু দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা চাকাভেদে গাড়িগুলোকে মালামাল পরিবহনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এই সীমা অতিক্রম করলেই জরিমানা দিতে হবে।’
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আরও বলেন, ‘গত বছর হবিগঞ্জে এবং গত সপ্তাহে সীতাকুণ্ডে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনে আগুন লাগানো হয়েছে। সড়ক-সেতু ঠিক রাখতে আমাকে কঠোর হতে হবে। আমি আর সহ্য করব না। এখন থেকে নিয়ম মেনে মালামাল পরিবহন করতে হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রজ্ঞাপনে চাকাভেদে প্রতিটি শ্রেণির গাড়ির জরিমানার হারও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি ধাপ পর্যন্ত এই জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার হার সর্বনিম্ন ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। যেমন ৬ চাকার গাড়ি ১৫ টনের বেশি, অর্থাৎ সাড়ে ১৬ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, সোয়া ১৭ টন পর্যন্ত করলে ৪ হাজার টাকা, ১৮ টন পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পৌনে ১৯ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। একইভাবে ২৬ চাকার গাড়ি ৪৮ দশমিক ৪ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, ৫০ দশমিক ৬ টন পর্যন্ত ৪ হাজার টাকা, ৫২ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত করলে ৬ হাজার এবং ৫৫ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর তা কার্যকর করতে গিয়ে ২৩ আগস্ট রাতে হোঁচট খান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগা হাটে স্থাপিত এক্সেল লোড স্টেশনের কর্মীরা। নতুন নীতির প্রতিবাদে ওই রাতে বড় দারোগা হাটে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন এলাকার একটি স্টেশন পুড়িয়ে দেন পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও তাঁদের সহকারীরা। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ২৫ টাকা বলে এ নিয়ে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম সড়ক ভবনে গাড়ির মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা, পুলিশের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, এসপি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. আবু মোজাফফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন মেনে পণ্য পরিবহন করলে আড়াই থেকে তিন গুণ পরিবহন বেড়ে যাবে। এই চাপ ভোক্তাদের ওপর পড়বে, যা শুক্রবারের বৈঠকে জানিয়েছি। এ জন্য ৬ চাকার গাড়িতে গাড়ির ওজন বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ১২ টন মালামাল পরিবহনের প্রস্তাব করেছি। তাঁরা বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এম এ এন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বৈঠকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা অনেক কথা বলেছেন। তাঁরা দুই বা তিন গাড়ির মালামাল এক গাড়িতে পরিবহন করেন। কিন্তু অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ব্যাপারে কোনো আপস নেই। জরিমানার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন তাঁরা। তাঁদের এই প্রস্তাব বিবেচনা করতে শিগগির বৈঠক করা হবে।