রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিক ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা অবশেষে ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ বুঝে পেয়েছেন। ফলে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার দীর্ঘ ২৭ মাস পর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শেষ হলো। তবে ক্ষতিপূরণের সর্বনিম্ন অর্থপ্রাপ্তির মানদণ্ড অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের অনেকে আরও কিছু টাকা পাবেন।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি। গত জুনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তিন কোটি মার্কিন ডলারের পুরোটাই জমা পড়ে রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে। এই অর্থ দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থসহায়তা বাবদ ভুক্তভোগীদের দেওয়া ২৫ লাখ ডলার তহবিলের মোট প্রাপ্তির সঙ্গে যুক্ত আছে।
জানা যায়, গত বছর পাঁচ কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ ও গত এপ্রিলে ৩০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ ছাড় করে সমন্বয় কমিটি। এ পর্যায়ে ৩ হাজার ১৬০ জন আহত শ্রমিক ও নিহতের পরিবারের সদস্য পেয়েছেন ৩২ কোটি টাকা বা ৪০ লাখ ডলার। ইতিমধ্যে ৯৯ শতাংশ ব্যাংক হিসাবেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পৌঁছে গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নিহতের পরিবার ১০ লাখ টাকা পাবে। আহত শ্রমিকেরা যাঁরা ৫ লাখের নিচে পেয়েছেন তাঁরাও একটি পরিমাণ বাড়তি টাকা পাবেন। এই টাকা শিগগিরই ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।’
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, সমন্বয় কমিটির কার্যক্রম ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। তবে ভবিষ্যতে কেউ কোনো দাবি করলে সেগুলো মীমাংসা করতে সীমিত আকারে কার্যক্রম চলবে। তা ছাড়া আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার বিষয়টি চলবে। তিনি আরও বলেন, গুরুতর আহতদের আজীবন সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করার পরিকল্পনা সমন্বয় কমিটির আছে।
জানা যায়, সমন্বয় কমিটি সব মিলিয়ে ২ হাজার ৮৮৯ জন আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৫ হাজার ১২৬ জন্য সদস্যকে ১০৭ কোটি টাকা বা ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় থাকা নিউ ওয়েব বটমের প্রায় ৬০০ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ দিয়েছে প্রাইমার্ক। এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩ লাখ ডলার। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ ডলারের তহবিল রাখা হয়েছে।
অবশ্য কিছু শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের আংশিক অর্থ এখনো যায়নি। এই তালিকায় আছেন, যেসব নিহত শ্রমিক ২৫ লাখ টাকার ওপরে পাবেন তাঁদের বাড়তি (২৫ লাখের অতিরিক্ত) এবং নতুন করে যুক্ত ৯ জনের অর্থ। এ বিষয়ে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, এঁদের অর্থ শিগগিরই চলে যাবে।
নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যসংখ্যা এবং আহত শ্রমিকদের আহতের ধরন অনুসারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেছে সমন্বয় কমিটি। সে অনুযায়ী, সর্বোচ্চ একজন নিহতের পরিবারের সদস্যরা পাচ্ছেন ৭৮ লাখ টাকা। ২৫ লাখ টাকা করে পাচ্ছে ৬১ নিহত শ্রমিকের পরিবার। নিহত শ্রমিকের পরিবার সর্বনিম্ন হলেও ১০ লাখ টাকা করে পাবে। যেসব আহত শ্রমিক ৫ লাখ টাকার নিচে পাবেন তাঁদের কিছু অর্থ অতিরিক্ত দেওয়া হবে।
দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। নয়তলা রানা প্লাজা ধসে মারা যান ভবনটিতে অবস্থিত পাঁচ পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন অনেক শ্রমিক। এ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত হয় সমন্বয় কমিটি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখ্তার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজটি শেষ হওয়াটা ইতিবাচক। তবে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ দেননি। এমনকি যে সোহেল রানা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেখান থেকেও শ্রমিকেরা কিছু পাননি।
তাসলিমা আখ্তার বলেন, ক্ষতিপূরণের জন্য মালিক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্বের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। তা ছাড়া রানা প্লাজার জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থাটিকে স্বীকৃতি দিয়ে আইন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা যায়নি।